শেষ পাতার তুমি || পর্বঃ ১০ || ফারিয়া আফরিন ঐশী

 

গল্পঃ--শেষ পাতার তুমি

লেখিকাঃ--ফারিয়া আফরিন ঐশী 

পর্বঃ ১০




আয়ানা মুচকি হেসে চমচম টা তুলে মুখে নিল!!

রায়ান---খাবারটা কেমন??

আয়ানা--সেই মজা!!

রায়ান--চলুন আজ আরো মজার খাবার খাওয়াবো!!

রায়ান আয়ানাকে নিয়ে রিকাশাতে উঠে রওনা হলো!!

পাক্কা ২ ঘন্টা জ্যামে আটকে বসে থেকে তারা উপস্থিত হলো টি এস সি তে!!

আয়ানা ইতিমধ্যে ঘেমে অস্থির!! বিরক্ত চোখে চকচকে সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে!! 

রায়ান ভাড়া মিটিয়ে আয়ানাকে বলল--চলুন!!

আয়ানা--ঢাবি আপনি কেমনে চিনলেন??

রায়ান শার্টের হাতা দিয়ে কপালের ঘাম টা মুছে বলে--৫ বছর এখানে পড়াশোনা করেছি চিনবো না!!আর না পড়লেও ঢাকাতে বসবসরত সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চেনে!!চলুন!!

আয়ানা মাথা ঝাকিয়ে রায়ানের পিছু হাটা ধরল!!

রায়ান টি এস সি তে এসেই প্রথমে একজন পেয়ারা মাখা ওয়ালার সামনে দাঁড়াল!!

রায়ান--পেয়ারা মাখান তো মামা বেশ ঝাল দিয়ে!!! 

মামা--হহ মামা!! কয় টাহার দিমু?

রায়ান--অনেক কিছু খেতে হবে!!১০ টাকার দিন!!

আয়ানা শুধু পেয়ারা মাখা ওয়ালার হাত আর মুখ দেখছে!!

আর মুখটা কেমন একটা করে দাঁড়িয়ে আছে!! 

মামা একটা মগের মধ্যে খানিক পেয়ারা আর মশলাপাতি নিয়ে একটা লাঠি দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে ২ টো কাগজের ওপর পেয়ারা ঠেলে রায়ানের হাতে ধরিয়ে দিল!!

রায়ান টাকা মিটিয়ে আয়ানার সামনে কাগজ ধরে বলল--নিন টেস্ট করুন!!

আয়ানা একটু দূরে সরে ফিসফিস করে বলল--ওনার হাতের অবস্থা দেখুন!!অস্বাস্থ্যকর খাবার এটা!

রায়ান আরও ফিসফিস করে বলল--স্ট্রিট ফুড অস্বাস্থ্যকরই হয়!!

এবার রায়ান চোখ দিয়ে ইশারা করে আয়ানাকে খেতে বলল!!!

আয়ানা এক টুকরো মুখে নিয়ে বড়বড় চোখ করে আয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে!! 

রায়ান কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই আয়ানা কাশতে শুরু করল!!!

রায়ান বুঝে নিল ঝালের কারণে এই অবস্থা!! 

তাড়াতাড়ি একজনের থেকে পানির বোতল নিয়ে আয়ানাকে দিল!!

আয়ানা পানি মুখে দিয়ে আরও কুঁচকে নিল নাক মুখ!!কোনোমতে কাশি কমাতে আরও খানিক খেয়ে বোতল দিয়ে দেয়!!ইতিমধ্যে আয়ানার শ্যাম মুখখানা লাল বর্ন ধারণ করেছে!!!

রায়ান --আপনার তো একেবারের ঝাল সহ্য হয় না!!

আয়ানা একটা বেঞ্চের ওপর বসে বরফ খাচ্ছে!! আয়ানার অবস্থা দেখে এক চা ওয়ালী তার আইসক্রিমের ফ্রিজ থেকে বরফ দিয়েছে!!

রায়ান কথাটা বলা মাত্রই ঝড়ের গতিতে কেউ এসে রায়ানকে জড়িয়ে ধরল!!

আশেপাশের লোকেরা মেয়েটার ফুপানির আওয়াজে তাদের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে!!! 

আয়ানা বরফ মুখে মাথা নিচু করে বসে আছে!! 

রায়ান ব্যাথা পেয়ে আওয়াজ করে যাচ্ছে!! 

কোনোমতে মেয়েটিকে ছাড়িয়ে বলল--সিরিয়াসলি!!লোক জনের মধ্যে তামাশা ক্রিয়েট করছো নাবিলা??

নাবিলা চারদিক দেখে চোখ মুছে বলল--কথা আছে!!সাইডে চলো একটু!!

রায়ান,আয়ানা আর নাবিলা একটু কর্নারে আসতেই নাবিলা বলল--আয়ানা তুমি ঐ খানে বসো!!আমরা একটু কথা বলে আসছি!!!

আয়ানা মাথা নাড়িয়ে পা বাড়ায় তার মনে হয়েছল

 রায়ান হয়তো বাধা দিবে কিন্তুু না!!

আয়ানা বেঞ্চিতে গিয়ে ধুপ করে বসে পড়ল!!দূরে একজোড়া কপোত-কপোতীর দিকে দৃষ্টি দিয়ে!!

রায়ানা আর নাবিলা এক কর্নারে এসে দাড়ালো!!

রায়ান এমন করে দাঁড়ায় যেন আয়ানাকে দেখতে পায়!!

রায়ান আয়ানার দিকে একটু দেখে নিয়ে বলল--বলো!!

নাবিলা কেঁদে ওঠে!! 

রায়ান--না কেঁদে বলো!!

নাবিলা--আই লাভ ইউ!!আমার করা ভুল গুলো আজ বুঝতে পারছি!!প্লিজ মাফ করো আমায়!!! 

রায়ান--সময় থাকলে বুঝলে আজ তোমাকে বা আমাকে সাফার করতে হতো না!!

নাবিলা--ওকে ছেড়ে দাও রায়ান!!!

রায়ান--আর ইউ সিরিয়াস!!

নাবিলা--আমি আর কোনো ভুল করবো না!!

রায়ান--আয়ানা আসার দায়িত্ব!! আমি ওকে আগে ওর নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে তারপর বাকি কথা ভাববো!!

নাবিলা--রিয়েলি!!ও মাত্র এইচএসসি দিল!!

রায়ান--তো??

নাবিলা--আমরা বিয়ে করে তারপর ওর সব দায়িত্ব পালন করবো!!!

রায়ান--ভেবে জানাবো!!

বলেই রায়ান চলে গেল!!আয়ানার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল--চলুন!!!

আয়ানা উঠে ধীর পায়ে রায়ানের পিছু হাঁটা ধরল!!

কিছুদূর এসে রায়ান বলল--আরে ঘোরাটা তো কম্পিলিট হলো না??

আয়ানা মাথা নিচু করে বলল--আর ঘুরব না!!বাড়ি চলুন!

রায়ান--কেন?শরীর খারাপ লাগছে??

আয়ানা মাথা নিচু করে না জানালেও মনে মনে বলল--আমার তো মন খারাপ রায়ান!!কেনো জানি না আপনি নাবিলার আপুর সাথে কথা বললেই আমার মন খারাপ করে!!!

রায়ান একটা সি এন জি ডেকে বলল--উঠুন!!

রায়ানও উঠে এলে সি এন জি চলতে লাগল!! 

আচমকা আয়ানার একটা প্রশ্নে রায়ানের ফোন দেখাতে ব্যাঘাত পরে!!

আয়ানা--আচ্ছা,,ভালোবাসা কি??

রায়ান হালকা হেসে বলল--ভালোবাসা এক অদ্ভুত নাম,যার কোনো অর্থ নেই!!তবুও এই ভালোবাসা আপনাকে বহু অর্থ শেখাবে!!

আয়ানা একটু ভেবে বলল--আরও সহজ করে বলুন!!!

রায়ান একটু ভেবে বলল--ভালোবাসা হলো চেনা নামের অচেনা আবেগ!!ভালোবাসার জন্য কয়েক সেকেন্ড যথেষ্ট!!! আপনি যখন কাউকে ভালোবাসবেন তখন দেখবেন তার খারাপটাও আপনার ভালো লাগবে!!

আয়ানা রায়ানের বলা কথাগুলো বারবার মনে মনে আওড়াতে লাগল!!!

আয়ানা আর রায়ান কিছুক্ষণ পর বাড়ির সামনে এসে নামল!!

রায়ানের অপেক্ষা না করেই আয়ানা কথা আওড়াতে আওড়াতে ভেতরে এসে দেখল সোফাতে শান্ত বসা!!

আয়ানা কপাল কুঁচকে তাকিয়ে গুটিগুটি পায়ে সোফার কাছে যেতেই শান্ত দৌড়ে এসে আয়ানাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল!!! 

ইতিমধ্যে রায়ান ঘরে প্রবেশ করে এমন দৃশ্য দেখে চোখ গুটিয়ে ফেলে!!

তারপর আয়ানার পেছনে দাঁড়িয়ে হালকা কাশি দিল!!

শান্ত আয়ানাকে ছেড়ে বলল--সরি!!

আয়ানা--তুমি এখানে??

শান্ত--হুমম!!দেশে এসে জানলাম তোমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে!! 

আয়ানা--হুমম!!মিট রায়ান!!

রায়ান আর শান্ত হ্যান্ডশেক করল!!

শান্ত --আয়ু তুমি স্টাডি করছো তো??

আয়ানা--হুমম!!

শান্ত এবার আয়ানার হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল--আমি আঙ্কেল,আন্টিকে খুঁজে আনবো!!আর কোম্পানির টাকা ও পে করে দিয়েছি!!

আয়ানা--ধন্যবাদ!!তুমি বসো!!

শান্ত--আজ আর না!!পরে আসবো!!নিজের খেয়াল রাখো!!

বলেই শান্ত আয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে বেরিয়ে গেল!!!

রায়ান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঘরে চলে গেল!!

আয়ানা ঘরে যেতেই রায়ান প্রশ্ন করল--উনি কে জানতে পারি??

আয়ানা--আমার খুব ভালো একজন ভাইয়া আবার বন্ধুও!!

রায়ান--ওহহ!!

আয়ানা আবারও রায়ানের বলা কথাগুলো খানিক আওড়ে নিয়ে বলল--তারমানে কি রায়ানকে আমি পছন্দ করি??কিন্তুু কেন পছন্দ করি??ওনাকে ভালোবাসবো এমন কিছু তো উনি করেননি!!!

আয়ানার নিজের ওপরই রাগ উঠে গেল!!!

অপরদিকে,,

শান্ত ঘরে দাবার গুটি সাজাচ্ছে!!

একটা গুটি আগে দিয়ে বলল--বি রেডি আয়ু!আজ থেকেই ডোজ শুরু হলো তোমার!!!

রায়ান সে তো অলরেডি অন্য কারো!!তোমাকে পেতে আমার খুব কষ্ট হবে না!!!

তারপর সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া ওড়াতে শুরু করে দিল!!!

আয়ানা টেবিলে খাবার খাচ্ছে, এর মধ্যে দাদি এসে পাশে বসে বলল--ছুড়ি,,আমাকে একটু মিকাপ করে দে তো!!!

আয়ানা খাওয়া রেখে বলল--কেনো গো টেনিস বুড়ি,,কই যাবে তুমি??

দাদি পান খাওয়া দাঁতে হেসে বলল--পাশের বাড়ির মাইয়াডার জনমদিন তাই যামু!!তুই ও তো যাবি!!

আয়ানা--ও ও!! চলো ঘরে!!

আয়ানা আর দাদি ঘরে এসে আয়ানা দাদিকে সাজাতে শুরু করল!!

দাদি--আমারে ফরসা বানাবি বেশি কইরা!!আর চোখে লাল দিয়া দিবি আর ঠোঁট খয়েরি লিবিসটিক!!বোঝছোস!!

আয়ানা--টেনিস বুড়ি চুপ করে বসো তো!!দেখছি আমি!!

রায়ান হুট করে ভেতরে এসে চমকে উঠে চিল্লিয়ে তার মাকে ডাকতে লাগল!!! 

#চলবে 
১০০০ শব্দের পর্ব♥️😊

বিঃদ্রঃ সবাই একটু গঠনমূলক মন্তব্য করে জানাবেন কেমন হচ্ছে!!!! ৪ তারিখের পর প্রতিদিন পাবেন😊😊😊

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !