গল্পঃ--- আমার নেশা তুমি
লেখিকাঃ-- Sabriha Sadi (সাদিয়া)
পর্ব : ১৩
শ্রেয়ান গটগট করে ফ্রেশ হয়ে এসে আলমারির সামনে যায়। সেখান থেকে কালো একটা টিশার্ট বের করে তা গায়ে জড়িয়ে নেয়।
ততক্ষণে আনিসা গুটি মেরে শুয়ে আছে। ঠোঁট টিপে হাসছেও। তখন শ্রেয়ানের চেহারা টা মনে করছে আর মিটমিট হাসছে। হাসি আটকাতেও পারছে না। তাই এতক্ষণ মুখে হাত দিয়ে হাসছিল। শ্রেয়ান ওয়াশরুম থেকে আসার পর মুখ থেকে হাত নামিয়ে নেয়। তবে ঠোঁট যেন বলছে "আমরা দু সঙ্গী প্রসারিত হতে চাই। আমাদের মুক্ত করে প্রসারিত করো।"
শ্রেয়ান আনিসার কাছে এগিয়ে যায়। শক্ত গলায় বলে,
"গেট আপ।"
".....
আনিসা যেন শুনেও শুনতে পাচ্ছে না। পাশ ফিরে সে শুয়ে আছে।
"আনিসা আই সে গেট আপ।"
"....
"আনিসা আমার কথা শুনতে পাচ্ছো না? বিছানা থেকে উঠো আনিসা।"
"...
আনিসা তবুও শুয়েই আছে।
শ্রেয়ান এবার বিছানায় উঠে। এই দেখে আনিসা তাড়াতাড়ি উঠে কম্বল টেনে নেয় নিজের দিকে। চোখ বড়বড় করে দেখছে শ্রেয়ান কে। বুঝাই যাচ্ছে মানুষটা রেগে আছে। চোখ লাল হয়ে আছে। আনিসার ভয়ও হচ্ছে।
"আ আপনি...
"....
" না নামেন বিছানা থেকে।"
আনিসার কথার জবাব না দিয়ে শ্রেয়ান আনিসার দিকে ঝুঁকে যায়। তা দেখে আনিসা ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিল। একটু পর চোখ খুলে দেখল শ্রেয়ান তার দিকে ঝুঁকে পাশের টেবিল থেকে ঔষধ নিচ্ছে।
এবার শ্রেয়ান আনিসার দিকে তাকায়।
"হা করো।"
"....
"কি বললাম হা করো?"
শ্রেয়ানের ধমকে আনিসা খুব ভয় পায়। চোখের পাতা ফেলল। শুকনো গলায় বলল,
"আ আমি ঔষধ..
"তুমি খাবে। মেডিসিন তুমি খাবে। মানে খাবে।"
"দে দেখুন আবার কিন্তু.."
"বমি করবে? ওকে করো। তবুও তুমি আজ মেডিসিন খাবে। আর সেটা আমার হাতেই। হা করো।"
"...
"মেয়ে কানে যায় না কি বলছি? হা করো।?"
".....
"আনিসা মুখ খুলো।"
আনিসা সাত পাঁচ না ভেবে বলে দিল।
"না।"
"না মানে? মুখের উপর কথা বলছো তুমি? আমার মুখের উপর কথা বলা একদমই পছন্দ নয়। চুপচাপ হা করো।"
"ন না খাবো না আমি। ওই জঘন্য জিনিস আমি খাবো না।"
"তুমি খাবে তোমার নানা এসেও খাবে।"
আনিসা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। রাগে বলে দেয়,
"আপনি খান দরকার হয় আপনার ২৪ গোষ্ঠী কে নিয়ে এসে খাওয়ান। আপনার নানা কে গিয়ে ঔষধ দিন আমি খাবো না।"
"কি বললে তুমি?"
"তো আর কি বলব? কখন থেকে জল্লাদের মতো জোর জবরদস্তি করছে। এছাড়া আপনার মতো রাক্ষস মানব কে আর কিই বা বলব?"
"হোয়াট? কি বললে তুমি? আমি জল্লাদ? রাক্ষস মানব আমি?"
শ্রেয়ানের মুখে নিজের কথা শুনে আনিসা জিহ্বায় কামোর দেয়। কি না কি বলে ফেলল। এখন কি করবে? রাগের মাথায় বলে ফেলেছে। এখন? আনিসা আবার ভাবে। "বেশ করেছি বলেছি। আমার সাথে এমন করছে কেন? ভালো করেছি বলেছি। দরকার হয় আরো বলব।"
আনিসা কে ভাবতেও সময় না দিয়ে শ্রেয়ান একটানে আনিসা কে বিছানায় ফেলে। আনিসার দিকে ঝুঁকে হাত শক্ত হাতে ধরে নিয়ে শ্রেয়ান আস্তে আস্তে বলে,
"উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলব কিন্তু বেশি মেজাজ বিগড়ে দিলে। তার চেয়ে ভালো চুপ করে মেডিসিন টা নিয়ে নাও। ডক্টর বলেছে তুমি অনেক উইক। ভেবো না ভয় দেখাচ্ছি। তুমি আমার রাগ তুলিয়েছ। তবুও আমি চাইছি না শ্রেয়ানের রাগ তুমি দেখো। ঔষধ খাওয়াতে আমি যা ইচ্ছা করে ফেলতে পারি কিন্তু। তাই খেয়ে নাও।"
শ্রেয়ানের হুমকি সরূপ কথাতে আনিসা ভয় পায়। গলা শুকিয়ে আসছে। কাঠ গলায় শুকনো কাঠের ঢুক গিলে।
তারপর বোকার মতো মাথা নাড়া।
শ্রেয়ান আনিসার হাত ছেড়ে দিয়ে উঠে বসল। মেডিসিন গুলি এগিয়ে দিল আনিসার দিকে। আনিসা নাক শিটকে শ্রেয়ানের দিকে তাকিয়ে মেডিসিন নিজের হাতে নেয়। শ্রেয়ানের চোখ মুখ দেখেই তার ভয়ে গা কাঁপছে।
শ্রেয়ান পানির গ্লাস টা আনিসার হাতে ধরিয়ে দিল। আর বলল,
"চুপ করে খেয়ে নাও।"
"....
"কি হলো?"
"হুম?"
"তাড়াতাড়ি খাও।"
"....
আনিসা হাতে ঔষধ নিয়ে ভাবছে এই বিষ কি করে হজম করবে সে?
"আনিসা তোমার সাথে কিন্তু আমি..
"না না খাচ্ছি খাচ্ছি।"
"এখনি মুখে দাও না হলে.."
আনিসা কথা না বাড়িয়ে মুখের মাঝে ঔষধ গুলি দিয়ে দিল চোখ বন্ধ করে। তারপর সাথে সাথে তিন ঢুক পানি খেলো। শ্রেয়ান আনিসার থেকে পানির গ্লাস টা নিয়ে টেবিলের উপর রাখে।
"ঠিক আছো তুমি?"
আনিসা চোখ খুলে তাকায়। মনে মনে ভাবে, "ঢং দেখলে গা জ্বলে। নিজেই পাষাণের মতো জোর করছিল এখন ভাব দেখিয়ে সোহাগ দেখায়। জুতা মেরে গরু দান।"
আনিসার গা গুলাচ্ছে। শ্রেয়ান দেখতে পাচ্ছে চোখ বন্ধ করে কপাল ভ্রু কুঁচকে রাখা আনিসা কে। শ্রেয়ান বেশি সময় নষ্ট করে না। আনিসার কানের পাশ দিয়ে হাত নিয়ে শ্রেয়ান আনিসার মুখ টা এগিয়ে আনে। একদণ্ডের মাঝেই আনিসার ঠোঁটে নিজেকে ডুবিয়ে দেয় চোখ বন্ধ করেই।
আনিসা সাথে সাথে রসগোল্লার মতো চোখ বড় করে নেয়। আর শ্রেয়ান চোখ বন্ধ করে আনিসার মোহে চলে যায়। এক অজানা প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় হতে থাকে দেহের মাঝে। সারা শরীরের শিরা উপশিরা নড়বড়িয়ে উঠে শ্রেয়ানের। মস্তিষ্ক তাকে গভীর থেকে গভীরতম হতে বলছে। তবুও শ্রেয়ান আনিসার ঠোঁট কে আকঁড়ে রেখেছে পরম আবেশে। সমস্ত শরীর শিউরিয়ে উঠে শ্রেয়ানের। সে যেন মধুর রেশে আছে। নেশার মাঝে নেশা করে চলছে শ্রেয়ান।
আর আনিসা? আনিসা এখন বুঝতে পারছে না কি হয়ে গেল তার সাথে। এক মুহূর্তেই শ্রেয়ান তার সাথে....
কিসের ঔষধ? কিসের বিষময় ঔষধ? শ্রেয়ানের ঠোঁটের ছুঁয়া কেই তার বিষের মতো লাগছে। মারাত্মক এক বিষ। এক বিষ যেন অন্য বিষের রেশ কাটাচ্ছে। আনিসা বিষ খেয়ে বিষ হজম করছে। এক বিষ দিয়ে অন্য বিষ উগলে নেওয়া হচ্ছে।
শ্রেয়ান মিনিট দশেক পর আনিসা কে ছেড়ে দিল। চোখ খুলে আনিসার দিকে তাকায়। আনিসার চোখ তখন ঝিলঝিল করছিল। আনিসার চোখের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করে শ্রেয়ান।
কিন্তু তখন অবুঝ শ্রেয়ানের অবচেতন মন মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
আনিসার দিকে অন্যায় চোখ দিয়ে তাকায় শ্রেয়ান। বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
আনিসার চোখের দিকে আর তাকানোর সাহস হয় না শ্রেয়ানের। সে অন্য দিকে তাকিয়ে আনিসা কে বলল,
"ঘুমিয়ে পড়ো।"
ব্যাস এটুক কথা বলেই শ্রেয়ান লম্বা লম্বা পা দিয়ে রুম ত্যাগ করে।
শ্রেয়ান ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে আছে। হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে তার পিনপিন করে জ্বলা সিগারেট। সেটা আবার নিজের ঠোঁটযোগলে ডুকিয়ে দেয় শ্রেয়ান। এক টান দিয়ে ধোয়া ভেতরে নেয়। আবার নাক মুখ দিয়ে সেটা বের করে আনে। বারংবার এমন করেই চলছে শ্রেয়ান। নিজেকে পুড়াতে আজ বড্ড ইচ্ছা করছে। পুড়িয়ে ছাই করে দিতে মন চাইছে।
মস্তিষ্ক বারবার আনিসার ঠোঁটের স্বাদের কথা মনে করাচ্ছে। আর শ্রেয়ান দিশেহারা হয়ে পরছে। একদম নিয়ে টান দিয়ে সিগারেটের আগুন ভেতরে নিচ্ছে। খুব ছটফট লাগছে ভেতরটা।
শ্রেয়ান নিজেও বুঝতে পারে না এটা ভালোবাসা কি না। নাকি অন্য কিছু। ভালোবাসা কি তা শ্রেয়ান আজো বুঝতে পাড়ে না।
সিগারেট টেনে শ্রেয়ান বিড়বিড় করে বলতে থাকে
"আনিসা। আনিসা তুমি মোহ আমার। পুরোটাই একটা নেশা। আনিসা তে আমি আসক্ত। জানি না ভালোবাসা কি না। কখনো কারো ভালোবাসা পাই নি তেমন করে। ছোট বেলায় মা কে হারানোর পর আমেনা আন্টি ছাড়া কারো থেকে একটু আদর পাই নি। বাবা? সে তো নিজের দ্বিতীয় বউ নিয়ে দিব্যি আছে। আমার কথা মনে থাকবে কখন? আনিসা আমি চাই ভালোবাসা কি তা তুমি আমায় শিখাও। তোমার থেকে আমি ভালোবাসা শিখতে চাই আনিসা। নিজেকে এখন দিশেহারা পাগল মনে হয়। তোমার সামনে গেলেই সব কিছু আমার উলটপালট হয়ে যায়।"
শ্রেয়ান একটু দম নেয়। আবার সিগারেট টান দেয়।
"পিচ্চি মেয়ে আমি তোমাতে মগ্ন থাকতে চাই। তোমাকে দেখলে তো ঠিক থাকতে পারি না। নিজেকে আটকে রাখতে কষ্ট লাগে। ভেতরে যেন দাউদাউ করে আগুন লাগনোর গরম হয়। কি করব আমি তখন কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি শুধু তোমাকে চাই আনিসা। তোমার মাঝে আমি আমার নেশা পাই। যা এই নঘন্য সিগারেট আর মদে হয় না আমার। তোমার মাঝে মারাত্মক নেশা আছে আনিসা। প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিনই তোমার নেশায় পা পিছলে ভয়ংকর ভাবে পরে গিয়েছিলাম। মেয়ে তুমি আমার নেশা।"
হঠাৎ শ্রেয়ান খেয়াল করল তার ঠোঁটের ফাঁক থেকে কেউ টেনে সিগারেট টা কেড়ে নিয়েছে। শ্রেয়ান সেদিকে তাকায়।
আনিসা জ্বলন্ত সিগারেট টা ফেলে দিয়ে কাশতে থাকে।
কাশতে কাশতেই বলে,
"কি ছাই মরা খাচ্ছেন? আপনি খাচ্ছেন আর ধোঁওয়ায় কাশতে কাশতে দম আটকে মরে যাচ্ছি আমি। এই জ্বলন্ত আগুন খেয়ে কি হয় ছাই পাশ।"
শ্রেয়ান এক নজরে তাকিয়ে দেখছে আনিসা কে। মনে মনে ভাবছে "আনিসা তুমি যদি বুঝতে আমার ভেতরে কিভাবে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে তবে এই এক বিন্দু আগুনের দ্বারা পুড়ানো সিগারেট কে জ্বলন্ত আগুন বলতে না। আমার ভেতরের আগুনের এক কণা ফুলকি বলে সম্বোধন করতে কি না তাতেও সন্দেহ।"
আনিসার কাশিতে শ্রেয়ানের ভাবনায় ছেদ ঘঠে।
"পানি?"
"....
"আনিসা বেশি কাশি পাচ্ছে?"
"আপনি জেনে কি করবেন? ওই আগুন গিলেন কেন? কি হয়?"
"কষ্ট মুছতে।"
"রাখেন তো কষ্ট। আমার থেকেও আপনার বড় কষ্ট.? আমার বাবা টাকার জন্যে আমায় বেচে দিল। কি করব না করব কিছুই জানি না। আর আপনি রাজ প্রাসাদে থেকে বলছেন আপনার কষ্ট? নিকুচি করেছে আপনার কষ্ট। আমার কষ্ট টা ভাবছেন কখনো? কই আমি এত কষ্ট পেয়েও তো আগুন খাই না।"
শ্রেয়াশ হতাশ হয়। মৃদু নিশ্বাস ছাড়ে। মনে মনে বলে,
"হায়রে পিচ্চি বড় হবে না নাকি? মেয়ে রা কি এসব খায়? পাগলি। উপরের হাসি কিছুই না সবই নিচক ভেতরের রক্তাক্ত মনের কাছে।"
"কি হলো বলুন?"
"হুম কি বলব? আর তুমি এখনো ঘুমাও নি কেন? যাও ঘুমাও গিয়ে।"
"আপনি আগুন কেন খান?"
"আমার ইচ্ছা হয় তাই খাই। যাও তুমি।"
শ্রেয়ানের কথায় পাত্তা না দিয়ে আনিসা বলে,
"আর খাবেন না।"
"আনিসা ঘরে যাও।"
"আরে আজব এটাও তো ঘরই নাকি?"
"তো তুমি আর আমি কি এক ঘরে থাকব নাকি স্টুপিড।"
আনিসা নিজের কথায় নিজেই বোকা বনে গেল। লজ্জাও পেল। তবুও বলল,
"আ আচ্ছা। কিন্তু আপনি আর এসব খাবেন না।"
"তোমার মতো পিচ্চি মেয়ের কথাতেই নাকি?"
আনিসার কথা টা শুনে রাগ হয়। এদিক ওদিক তাকায়। টেবিলের উপর সিগারেটের প্যাকেট টা দেখতে পায়। আনিসা এগিয়ে যায় প্যাকেট টা নিতে।
প্যাকেট হাতে নিয়ে আবার ব্যালকুনিতে যায়। এক ফিকা দিয়ে প্যাকেট টা ফেলে দেয়।
তা দেখে শ্রেয়ান অবাক হয়। সাথে রাগও উঠে। তার স্বভাবই হুটহাট রাগ উঠা। আর রাগে নিজেকে কন্ট্রোল রাখতে না পারা।
শ্রেয়ান কড়া ভাবে বলে,
"কি করলে এটা?"
"...
"আন্সার মি ননসেন্স।"
"বেশ করেছি। আবারও করব। এমন আগুন খান কেন? না করেছিলাম না? আবারও করব। এসব খেলে ছুঁড়ে ফেলে দিব"
আনিসা গরগর করে কথা গুলি বলে চলে যেতে নিলেই শ্রেয়ান আনিসার হাত ধরে নেয়। ঘুরিয়ে দেওয়ালের সাথে চেঁপে ধরে। রাগে সাপের মতো ফুসফুস করছে।
চলবে.....