গল্পঃ--- আমার নেশা তুমি
লেখিকাঃ-- Sabriha Sadi (সাদিয়া)
পর্ব : ১২
শ্রেয়ান বসে আছে আনিসার সামনে। আর আনিসা গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। এখনো ঘুমাচ্ছে।
শ্রেয়ান দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকায়। রাত ৮ টা বেজে ৩৫ মিনিট। শ্রেয়ান এবার উঠে দাঁড়ায়। এগিয়ে যায় আনিসার দিকে। আনিসার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। শ্রেয়ান মিনিট কয়েক ঘুমন্ত ঘুমকাতুরে মেয়ে ঘুম কুমারী কে দেখে। তারপর আনিসার দিকে ঝুঁকে যায়। খুব কাজ থেকে আনিসা কে দেখে। কিছু না বলে আবার সোজা হয়ে দাঁড়ায়। তারপর চলে যায় রুমের বাহিরে।
রান্নাঘরে গিয়ে আনিসার জন্যে স্যুপ রান্না করে। ডক্টর আঙ্কেলের কথা অনুযায়ী আনিসার ঘুম আর কিছুক্ষণের মাঝে ভেঙ্গে যাবে। তাকে ঔষধ খাওয়াতে হবে।
শ্রেয়ান গরম গরম স্যুপ টা ঢেকে ট্রেতে করে উপরে নিয়ে যায়। বিছানার পাশের টি টেবিলে ট্রে রাখে। তারপর আনিসার দিকে তাকিয়ে আনিসার পায়ের কাছে বিছানায় বসে। আনিসার এই গভীর ঘুম টা ভাঙ্গাতে শ্রেয়ানের ইচ্ছে হচ্ছে না। সে বসেই আছে। আনিসা কে ডাকও দিচ্ছে না।
চাদরের ভেতর থেকে আনিসার হাত নিয়ে আসল শ্রেয়ান।
খুব শক্ত করে নিজের হাতের মুঠোয় সেই হাত নিয়ে নেয় শ্রেয়ান। মুগ্ধ হয়ে আনিসার দিকে তাকিয়ে রয়।
বিড়বিড় করে বলল,
"এই হাত কখনো ছাড়ব না আনিসা।"
মিনিট দশ শ্রেয়ান ওভাবেই বসে থাকল। আনিসার হাত তার শক্ত হাতের মুঠোয়। আর মুগ্ধ হওয়া নজর ঘুমন্ত নিঃষ্পাপ আনিসার পানে।
আনিসা মিটমিট করে তাকায়। শ্রেয়ান আস্তেআস্তে হাত টা বিছানার উপর রেখে নড়েচড়ে বসে। আনিসা নাড়িয়ে নাড়িয়ে চোখের পাতা মেলে। কাঁপা ঠোঁট নেড়ে বলে,
"আমাকে কি ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছেন?"
এই পরিস্থিতি তে আনিসার মুখে এমন কথা শুনে শ্রেয়ান বেশ অবাক হয়। ভ্রু কুঁচকে শ্রেয়ান মৃদু চিৎকার দিয়ে বলে উঠে।
"হোয়াট?"
"না আমার মনে আছে আপনি আমায় ছাদ থেকে ফেলে দিতে চাইছিলেন আর কি কি যেন বলছিলেন। আমার ভয় লাগছিল। ভেতরটা কাঠ ফাটা রোদের মতো শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল। আমার আর মনে নেই। এখন কি আমি ছাদের নিচে আছি?"
"ওহ শীট। আল্লাহ কোনো ননসেন্সের পাল্লায় পরছি আমি ডেমেট..."
"কি হয়েছে? বলুন না আমি কোথায়?"
"....
"আমি মরে যাই নি তো?"
"না তুমি মরো নি। জলজ্যান্ত হয়ে আমার নরম বিছানায় শুয়ে আছো স্টুপিড। আল্লাহ উদ্ধার করো।"
"....
আনিসা মুখ চুপষে শুয়ে রয়। শ্রেয়ান চোখ বড়বড় করে দীর্ঘ শ্বাস নেয়। তারপর উঠে দাঁড়ায়।
এক চামচ স্যুপ এগিয়ে দিয়ে বলল,
"খেয়ে নাও।"
"না খাবো না আমি।"
"কানের নিচে একটা দিব।"
"....
শ্রেয়ানের ধমকে আনিসা কপাল কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।
"একটা চর দিলে আরেক টা চর দেওয়ার জায়গা পাওয়া যাবে না। চুপ চাপ খাও না হলে সত্যিই তুলে আছাড় মেরে ছাদ থেকে ফেলে দিব।"
শ্রেয়ানের হুমকি তে আনিসা ভয় পায়। বড় রকম ঢুক গিলল সে। শ্রেয়ানের কথা সে সত্যি ভেবে খুব ভয় পেতে থাকে।
"খাও বলছি।"
শ্রেয়ানের কড়া কথা শুনে ভয়ে আনিসা তৎক্ষণাৎ হা করল। শ্রেয়ান আনিসার মুখে স্যুপ তুলে দেয়। আনিসাও লক্ষ্মী হয়ে খেতে থাকে। আবার শ্রেয়ানের দিকেও তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল। লোক টা কে অদ্ভুত বললেও ভুল হবে উনি সাইকো। বদ্দ উন্মাদ।
আনিসার আর খেতে ইচ্ছা করছে না। নাক শিটকাচ্ছে। শ্রেয়ান বুঝতে পারছে তবুও আনিসার মুখে একের পর এক চামচে স্যুপ তুলে দিচ্ছে।
"ডক্টর আঙ্কেল বলেছে তোমার ওই টুকুন শরীরে যে রক্ত আছে তা মশাও চুষে নিতে পারবে। তোমার ওই এক বিন্দু রক্ত শ্রেয়ান বেশ চুষতে জানে। শরীরে যে রক্ত আছে তা মশা নয় আমিই চুষে নিব। চুপ চাপ খাও।"
শ্রেয়ানের শক্ত শক্ত কথায় আনিসা চুপ করে রয়েছে। শেষের কথা গুলি তে লজ্জাও লেগেছে খানিক।
কিন্তু তার চেয়েও বেশি অবাক হয়েছে। মনে মনে বলতে থাকে "উনি কি বইয়ে পড়া সেই ভ্যাম্পায়ার?"
শ্রেয়ান তীক্ষ্ণ নজর দিয়ে আনিসার চোখ দেখল। বুঝাই যাচ্ছে মেয়েটা ভাবছে। আরেক চামচ স্যুপ আনিসার মুখের কাছে এগিয়ে নিয়ে শ্রেয়ান বলল,
"আমি ভ্যাম্পায়ার কি না সেটা তোমার ভাবতে হবে না। এটা ভেবে চিকন হতে আরো চিকন হওয়ার কোনোই দরকার নেই।"
শ্রেয়ানের কথা শুনে আনিসা বিষম খায়। তাড়াতাড়ি আনিসার মুখের সামনে পানি ধরে। আনিসা শ্রেয়ানের দিকে তাকিয়ে পানি খায়। আনিসার মুখের ভাব দেখে শ্রেয়ান খুব হাসি পায়। ভেতরে ভেতরে খুব হাসে। যে হাসি সামনের থাকা মানুষটারও অগোচরে।
"এই বয়সে এত চিন্তা করলে আমার হবে ফের বিপত্তি শেহজাদী।"
শ্রেয়ানের কথায় আনিসা তিন চার বার এক টানা চোখের পাতা ফেলল। তারপর একটা শুষ্ক ঢুক গিলল।
"আর খেতে হবে না। এখন মেডিসিন টা খেতে হবে।"
এবার আনিসা মাথা ঝাঁকে। নেড়ে চড়ে বসে। হুট করেই মুখ দিয়ে বলে ফেলে,
"আমি ঔষধ খাবো না।"
"খাবে না মানে?"
শ্রেয়ানের মৃদু ধমকেও আনিসা ভয় পায়। আধোশোয়া অবস্থা থেকে চাদর টেনে পুরোপুরিভাবে শুয়ে পড়ে।
শ্রেয়ান তিন টা ট্যাবলেট হাতে নিয়ে বলে,
"আনিসা এই রকম আমি মুটেও পছন্দ করি না। উঠো।"
"....
"আনিসা উঠো।"
"না আমি ঔষধ খাবো না।"
"কেন খাবে না?"
"আমি খাবো না। ঔষধ খেতে আমার ভালো লাগে না। আপনি যান।"
"যাবো মানে?"
".....
"আনিসা তুমি উঠবে কি না?"
".....
"আনিসা"
শ্রেয়ান আনিসার দিকে ঝুঁকে যায়। আনিসা পাশ ফিরে চাদর গুঁজে শুয়ে ছিল। শ্রেয়ান আনিসার হাত টেনে তার দিকে ফিরায়।
"বললাম না আমি খাবো না? খাবো না আমি। আমি ঔষধ খাবো না।"
আনিসার হাত পা নাড়ানাড়ি দেখে শ্রেয়ান শুয়ে থাকা আনিসার উপর উঠে বসে। এক হাতে আনিসার হাত চেঁপে ধরে আনিসার মাথার কাছে নিয়ে। আনিসা চাইলেও নড়তে পারছে না। তাই ঠোঁট খিঁচে আছে। কথাও বলছে না। মোট কথা সে ঔষধ খাবে না।
"আনিসা মুখ খুলো। মুখ খুলো বলছি।"
"....
"আনিসা তোমায় কিন্তু আছাড় মারব এখন। মুখ খুলো। ওপেন ইউর মাউথ ননসেন্স। আনিসা তোমাকে মুখ খুলতে বলছি না?"
কিছুতেই কিছু কাজে হচ্ছে না। শ্রেয়ানের ধমকও এখন আনিসা কে ভয়ে টলাচ্ছে না। সে সেই ঠোঁট চেঁপেই শ্রেয়ানের হাতের বাঁধনে আবদ্ধ হয়ে শুয়ে আছে। যাই হয়ে যাক ঔষধ সে কিছুতেই খাবে না।
ছোট থেকে জ্বর কিছু হলেও আনিসা কে দিয়ে ঔষধ খাওয়ানো যেত না। তার বাবা মা ঘোড়ার ডিম এনে দিবে বললেও সে মুখে হাত চেঁপে থাকত ঔষধ খাবে না। তখন নাড়ি ছেড়া তার জননী চালাকি করে খাবারে বা শরবতে ঔষধ গুলিয়ে দিত। তবুও কখনো সে তা উগলে ফেলত।
শ্রেয়ানের এই গুলি এখন বিরক্ত লাগছে। রাগে সে আনিসা কে অনেক জোরে ধমক দেয়। তবুও আনিসা কিছু বলে না। ঠোঁট চেঁপে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়।
শ্রেয়ানও কম যায় না। সে যে "না" শুনে অভ্যস্ত নয়। আনিসা কে ঔষধ খাওয়াবেই খাওয়াবে। মনে মনে কিছু একটা ঠিক করে সে ঠোঁট বাকিয়ে হাসল।
তারপর শান্ত হয়ে আনিসা কে বলল,
"আনিসা তুমি ঠিক করো তো ঔষধ খাবে নাকি আমার চুমু খাবে?"
শ্রেয়ানের কথা শুনে আনিসা ছানাবড়া হয়ে চোখ বড়বড় করে তার দিকে তাকায়।
"কি হলো পিচ্ছি? মেয়ে, তাড়াতাড়ি বলো কি করবে?"
"....
আনিসা এখন একটু ভয়ই পাচ্ছে।
"কি হলো? খাবে নাতো? ওকে ফাইন মেডিসিন খেতে হবে না। আমার চুমুই খাও। দেখবে অসুখ একদম সেরে যাবে।"
এই বলে শ্রেয়ান এগিয়ে যেতে থাকে আনিসার দিকে। আনিসার হাতের বন্ধনও শ্রেয়ান আস্তে আস্তে ঢিলে করে দিচ্ছে। শ্রেয়ানের এগিয়ে আসা দেখে আনিসা ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠল। সাথে সাথে শ্রেয়ান ঔষধ গুলি মুখে দিয়ে দিলআনিসার। সে হাত চেঁপেই রেখেছে আনিসার মুখে। আনিসা উমউম করছে। শ্রেয়ান গ্লাস টা এনে আনিসার মাথা একটু উঁচু করে পানি মুখে তুলে দিল। আনিসা পানি খায় সাথে অনিচ্ছাকৃত ঔষধ গুলিও।
এবার সে অনেকটা রেগে যায়। কম্বলসম্বল সরিয়ে উঠে বসে। আনিসা জানেই কি হতে চলেছে।
রাগে কটমট করছে শ্রেয়ান কে দেখে। আনিসার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে তার বমিবমি পাচ্ছে। শ্রেয়ান ঝাঁপটে আনিসার মুখে হাত চেঁপে ধরল। এতে আনিসার শরীর আরো গুলিয়ে উঠে। আনিসা এক দলা বমি করে দিল শ্রেয়ানের উপর। শ্রেয়ান ভ্যাবলার মতো নিজের দিকে তাকিয়ে আছে।
মেজাজ টা তার বিগড়ে গেল। নিজের দিকে তাকিয়ে রাগে কটমট করে আনিসার দিকে তাকায়। আনিসা তখন লজ্জা আর ভয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। তারই বা দোষ কি? সে তো জানতোই এমন হবে।
বমি সব শ্রেয়ানের হাতে আর গায়ে পড়েছে। টিশার্ট টার অবস্থা নাজেহাল। বলার মতো নয়। একটু আগে খাওয়া সব টা স্যুপ যেন আনিসা উগলে দিয়েছে। শ্রেয়ানের ভীষণ রকম রাগ হচ্ছে সাথে গা গুলিয়ে যাওয়ার উপক্রম। রাগে দাঁতে দাঁত কেটে কটমট করে বলল,
"আনিসা তোমাকে আমি..."
কথা শেষ না করে শ্রেয়ান লম্বা লম্বা পায়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
আনিসার খুব হাসি পাচ্ছে। মিটমিট করে ঠোঁট চেঁপে হাসছে।
"বেশ হয়েছে। খুশি হয়েছি। আবারো করব। যতবার আপনি আমায় এভাবে জোর করে ওই বিচ্ছিরি জিনিস খাওয়াবেন ততবারই আমি বমি করব। আপনার গায়ের উপরেই করব। হাজার বার করব। দেখি আপনি কি করেন। আমাকে কি করে ঔষধ খাওয়ান। আমি ওই বিচ্ছিরি জিনিস কিছুই খাবো না। কখনো না। কোনো ভাবেই না। উঁহু।"
শ্রেয়ান ওয়াশরুমে দাঁড়িয়ে আছে। শরীরের টিশার্ট খুলে অর্ধেক শরীর ভিজিয়ে নিয়েছে।
রাগে তার শরীর কিটকিট করছে। শরীর যেন জ্বলছে। এই ভাবে ঔষধ খাওয়ানোর পর শেষে কিনা... ভেবেই শ্রেয়ানের রাগ হচ্ছে। আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে নিজেই তাকিয়ে আছে। হাত দুটি বেসিনের দুদিকে দিয়ে একটু ঝুঁকে আছে।
উন্মুক্ত শরীরে শ্রেয়ান আয়নার সামনে নিজের চোখের দিকে নিজেই তাকিয়ে থেকে বলছে,
"আনিসা তোমাকে তো আমি মেডিসিন খায়িয়েই ছাড়ব। যে করেই হোক শ্রেয়ান তোমায় ঔষধ খাওয়াবেই। আমি কখনো কোনো কিছুতে হারি নি হারাবোও না। তোমার মতো ওই টুক পিচ্চি মেয়ের কাছে তো নয়ই। ঔষধ তোমাকে আজ খেতেই হবে। শ্রেয়ান তোমায় আজ ঔষধ খাওয়াবেই এট এ্যানি কস্ট আনিসা।"
চলবে....