গল্প----আমার নেশা তুমি || Sabriha Sadi (সাদিয়া) পর্ব : ১

 গল্পঃ---আমার নেশা তুমি

লেখিকাঃ-Sabriha_Sadi (সাদিয়া)

পর্ব : ১




"ভাগ্য কতটা নির্মম। আজ কি না আমার বাবা আমাকে টাকার জন্যে বিক্রি করে দিবে। হায় আল্লাহ কি নিষ্ঠুর দুনিয়া তোমার। এর থেকে ভালো আমার নিয়ে যাও। জানি আমার বিশ্ব নবী বলে গিয়েছে, যেমন পরিস্থিতিতেই থাকি না কেন নিজের মৃত্যু কামনা যেন না করি। কিন্তু আল্লাহ যেখানে আমার বাপ আমায় বেচে দিচ্ছে অন্যের কাছে সেখানে আমার কি বলার আছে? আল্লাহ আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করো। এমন জঘন্য কাজ থেকে বিরত রাখো।"


আনিসা নিজের মনে মনে কথা গুলি বলে ডুকরে কেঁদে উঠে। 


তার বাবা মাদকাসক্ত। যেমন তেমন নয় খুব বেশিই রকম। যাকে কি না বলে "সব সীমার উর্ধ্বে।"

এই নেশার কারণে আনিসুর মিয়া তার সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছে। বিঘা বিঘা জমি ছিল তার। নেশা আর জুয়া খেলায় সব শেষ করে দিয়েছে। 

অবশেষে তার সম্বল হলো এই থাকার বাড়ি আর মেয়ে আনিসা।


আনিসার মা এক বছর আগে মারা গেছে। মা মরা মেয়ের উপর এখন নরপশু নিজের জোর খাটাচ্ছে। তাকে এক জনের কাছে বিক্রি করে দিয়ে টাকা নিবে এক কোটি। মা থাকলে হয়তো তার উড়শের সন্তান কে এমন বিপদে ফেলতে দিত না। কিছু একটা করতই। 


মেয়ের দাম এক কোটি। কম দাম নাকি? এমন মানুষ এক কোটি কেন? ১০ হাজার টাকা দিলেও হয়তো অমত করবে না মেয়ে দিয়ে দিতে। 


আনিসা ভাবছে কি করবে? বয়সও তার বেশি নয়। ১৮ ও হয়নি। এই বছর এইচএসসি দিবে। সদ্য ফোটে উঠা ফুল টা কে পরিপক্ব হওয়ার আগেই ঝরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। তাও আবার জন্ম দেওয়া পিতা। যারই রক্ত বইছে তার শিরা উপশিরায়। 


সে ভেবে পায় না বাবা কি এমন হয়? যে কি না নেশা করবে বলে নিজের মেয়ে কে বিক্রি করে দেওয়ার মতো জঘন্য কাজেও দুইবার ভাবে নি। 


আনিসা বাবার পায়ে ধরে অনেক কান্না কাটি করেছে বার কয়েক। কোনো লাভ হয়নি। 

বারবার তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে খারাপ কথা বলে। লাথি দিয়ে মাটি তে ফেলে দিয়েছে। তবুও আনিসা বারবার বাবার কাছে যাচ্ছে। যদি একটু দয়া হয় ওই নিষ্ঠুর মনে। 


আখেরে কোনো লাভই হলো না। 


আনিসা সকাল থেকে কান্না করতে করতে জীবন যেন এখন তার দুর্ভিক্ষ তে রূপান্তর হয়েছে। সেখানে আশার কোনো আলোই চোখে পরছে না। তবে কি বাবার দেওয়া জীবনি তাকে মেনে নিতে হবে?


সকাল থেকে মুখে পানি পর্যন্ত নেয় নি মেয়ে টা। মুখ শুকিয়ে পাণ্ডুর হয়ে গিয়েছে। চোখ গুলি ফ্যাকাসে লাগছে যেন রক্ত বিহীন চক্ষু। আনিসার লাল চিকন ঠোঁট গুলিও শুকিয়ে সাদা হয়ে আছে। তার সেই ঝমকালো লাবণ্য এখন চেহারায় বিরাজ করছে না। 


করবেই বা কি করে? এমন অবস্থায় থাকলে কি আর রূপ লাবণ্য দেখা যায়?


আনিসা এখন ঠিক মতো কান্নাও করতে পারছে না। শরীর খুব কাঁপছে। বসে থাকতেও বেশ কষ্ট হচ্ছে তার। 

তবুও শেষ বারের মতো বাবার কাছে নিজের জীবনের এমন হাল যেন না হয় তার কথা জানাবে। হ্যাঁ জানাবে।


আনিসুর মিয়া মদ খেয়ে টাল হয়ে আছে। তার মদ খাওয়ার কোনো সময় লাগে না। সকালে দুপুরে বিকেলে রাতে যখনি মন চায় পানির মতো গলায় ঠেলে দেয়। 


রাত ৭ বা ৮ টা বাজে। আনিসা সঠিক তা জানে না। এত কিছু জানার তার দরকার নেই। সে নিজের এক সুন্দর জীবন নিয়ে চিন্তিত। যা সবাই আশা করে। সবার কাম্য। আনিসা জানে না সে তেমন জীবন আদৌও পাবে কি না। তবুও চেষ্টা করেই চলছে। 


আনিসা ধীর পায়ে বাবার দিকে এগিয়ে যায়। আনিসুর মিয়া তখন বিছানায় বসে হেলছে ঢুলছে আর গলায় পানির ন্যায় হারাম মদ গিলছে। 


আনিসা গিয়ে তার বাবার সামনে দাঁড়ায়। আনিসুর একবার দেখে আবার মদ পানে ব্যস্ত হয়ে যায়। 


সে গিয়ে তার বাবার পা জড়িয়ে ধরে। 

"বাবা আমায় দয়া করো তুমি। তোমায় আমি মানুষের বাসায় কাজ করে টাকা দিব। তবুও আমায় বিক্রি করে দিও না।"


কথা গুলি বলতে আনিসার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। খুব খারাপ লাগছিল। তবুও তাকে বলতে হবে।


"বাবা এমন করো না। আমি মাসে মাসে তোমায় টাকা দিব। আমার পড়ালেখা শেষ হয়ে গেলে চাকরি করে টাকা দিব। তবুও এমন করো না বাবা।"


মেয়ের কথা শুনে আনিসুর মিয়া মদ খাওয়া রেখে তার দিকে তাকায়। "তুই টাকা দিবি?"

"হ্যাঁ বাবা আমি বাসায় কাজ করে তোমায় টাকা দিব।"

"সেটা বহুত দেরি। মাসে মাসে। আর তোকে ওই মানুষ টার কাছে দিলে এক কোটি টাকা পাবো এক সাথে। আর মাসে মাসে দিলে সারা মাস আমি মদ খাবো কি করে? জ্বালাতন করিস না তো সর।"


আনিসুর মিয়া মেয়ে কে লাথি মেরে ফ্লোরে ফেলে দেয়। 

আনিসা তবুও আবার গিয়ে বাবার পা বুকের সাথে জড়িয়ে কান্না করে বলতে থাকে,

"বাবা এমন করো না। তোমার পায়ে পড়ি আমার বাবা এমন করো না। এমন নিষ্ঠুর হইও না। দয়া করো আমার উপর।"


আনিসুর মদের ঘোরে এবার শক্তে আনিসা কে পা দিয়ে ঠেলে দেয়। যার ফলে আনিসা ঘাটের পাশে গিয়ে হুমড়ে পরে। কপাল ফেটে রক্ত পরছে মেয়ে টার। 


"বিরক্ত করিস না তো আমায় ঠিক মতো খেতে দেয়। যা এখান থেকে। এত জ্বালাতন আমার ভালো লাগে না।"


আনিসুর মিয়া নিজের কথা শেষ করে আবার গলায় মদের বোতল ঠেলে দেয়। 


আনিসা কান্না করে করে ভাবতে থাকে,

"এই মানুষ টা তো কারবালার ময়দানের সীমারের চেয়েও নিষ্ঠুর নির্দয়। এই মানুষ কে বলার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। এমন নির্দয় মানুষ দুনিয়াতে আছে?"


আনিসা নিজের সাথে কথা গুলি বলে তার ঘরে চলে যায়। 


নিচে বসে ঘাটের সাথে মাথা হেলিয়ে দেয়। মাথাটা তার খুব ব্যথা করছে। ভার লাগছে। শরীরে শক্তি পাচ্ছে না। কপাল দিয়ে গরম রক্ত পরছে। চোখ গুলি কেমন প্রদীপের মতো নিভে আসছে। আনিসা আর কিছু ভাবতে পারছিল না। শরীর ক্রান্ত, এত কান্না, খালি পেট তার উপর কপাল দিয়ে রক্ত পরছে। আনিসা আর নিতে পারছিল না। ওভাবেই ফ্লোরে বসে ঘাটে মাথা হেলান দিয়ে চোখের পাতা নিভিয়ে নেয়। 


কতক্ষণ ঘুমাল তা সে জানে না। কিন্তু ঘুম ভেঙ্গে গেল দরজায় কড়া নড়ার শব্দে। 


আনিসা উঠবার শক্তি পাচ্ছে না। তবুও উঠে। আনিসুর মিয়া মদ খেয়ে হয়তো শুয়ে আছে। তার হুস নেই। 


আনিসা মাথার ওড়না টেনে  আস্তে আস্তে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। 


"আসসালামু আলাইকুম ম্যাম।"


লোকটার কথা শুনে আনিসার খুব অবাক লাগে। কালো প্যান্ট কালো কোট কালো সু পড়া এমন এক লোক তাকে ম্যাম ডাকছে বিষয় টা তো অবাক হওয়ার মতোই। 

লোক টার হাতে একটা সুটকেস। আনিসা বুঝতে পারল এটা হয়তো তাকে নিয়ে যাওয়ার টাকা। 


আনিসা সড়ে আসে দরজা থেকে। 


লোক টা গিয়ে আনিসুর মিয়া কে ডেকে তুলে। তার হাতে টাকা দেয়। 


"আমি এখন আপনার মেয়ে কে নিয়ে যেতে পাড়ি?"

"হুম নিয়ে যাও।"


আনিসুর মিয়া মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

"যা মা যা উনার সাথে যা। ভালো থাকিস।"


কথা শেষ করেই আনিসুর মিয়া টাকায় হাত বুলাতে থাকে। 

"ম্যাম চলুন আমাদের দেরি হয়ে যাবে।"


আনিসা খুব অবাক হয়। ভীষণ ভাবে অবাক হয়। লোক টা এই ভাবে কেন কথা বলছে তার সাথে? তাকে কিনে নিয়ে যাচ্ছে অথচ তাকেই ম্যাম ডাকছে। আনিসা কিছুই বুঝতে পারে না। 


"ম্যাম চলুন।"

"আসছি।"

"ম্যাম।"

".....

"আপনার কোনো ড্রেস কিংবা কিছু নিয়ে যেতে হবে না।"


আনিসা কিছু না বলে লোক টা কে রেখে দরজা দিয়ে বের হয়ে যায়। লোক টা একবার আনিসুর মিয়ার দিকে তাকিয়ে আবার ছুটে চলে বাহিরে। 


গাড়ির সামনে গিয়ে পেছনের দরজা খুলে দিয়ে আনিসা কে বলে,

"ম্যাম উঠুন।"


আনিসা কথা না বাড়িয়ে উঠে বসে। তার অবাকের সীমা থাকছে না। লোকটার ব্যবহারে সে অবাক না হয়ে পারছে না। লোক টা তাকে এক কোটি টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে গেল অথচ তাকে ম্যাম বলছে, সম্মান দিচ্ছে। আনিসার মাথায় কিছুই ডুকছে না। 


সে চুপ করে বসে আছে। 

অবশেষে সেই অন্ধকার জীবনই তাকে পেতে হলো। ভেবেছিল বোরকা পড়ে আসবে। কিন্তু তা আর করল না। কি হবে করে? এখন তার জীবন তো সাধারন ভাবে চলবে না। অন্যের অধীনে থাকতে হবে। যে তাকে কিনে নিয়ে গেল। হয়তো ভালো কারণে নেয়নি। নিশ্চয় কারণ টা হবে "ভোগ বিলাশ।"


আনিসা ছোট তবে এই টুক বুঝার মতো বয়স তার হয়েছে। 

"আমাদের দেশের নির্দিষ্ট কিছু বয়সে সবার মাঝে কমন কিছু জ্ঞান স্বাভাবিক ভাবে চলে আসে।"


আনিসা চুপ করে বসে আছে। কপালে রক্তের দাগ। ড্রাইভ করা লোক টা সামনের লুকিং গ্লাসের দিকে তাকিয়ে দেখল আনিসা কে। 


"ম্যাম আপনার বাবা বুঝি আপনায় মেরেছে?"


লোকটার কথায় রানি চুপ ছিল। কিন্তু মুখে তাচ্ছিল্যের একটা হাসি টেনে আনল। 


লোকটা কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলল,

"ম্যাম জানেন স্যার খুব ভালো মানুষ। আপনি তার কথা মতো চললে সে আপনায় হয়তো মাথায় করে রাখবে। যদিও আমি সব টা জানি না। কিন্তু এটা জানি স্যারের অবাধ্য হলে স্যার ভীষণ রেগে যায়। আর রাগ উঠলে যা খুশি করে। খুব রাগি তো স্যার তাই। কিন্তু মানুষ ভালো।"

লোক টা কথা শেষ করে দম নেয়। আনিসা তবুও চুপ থাকে। কিন্তু সে বেশ বুঝতে পাড়ে এই লোক তাকে কিনে নেয়নি। 


তাকে অন্য কেউ কিনেছে। যে এই লোকের স্যার। তাই হয়তো তাকে ম্যাম বলছে সম্মান করছে। আনিসার আগ্রহ লাগে তবুও মনের মাঝে ভয় কষ্ট লুকিয়ে থাকে। 


আনিসা ফের চুপ করে জানালার বাহিরে নজর দেয়। বাহির দৃশ্য দেখতে থাকে। অন্ধাকার কালো শহরের মাঝে হয়তো ল্যাম্পপোস্টের আলো জ্বলছে কিন্তু তার অন্ধকার জীবনে হয়তো আর আলো থাকবে না। 


আনিসার বুকের ভেতর এক অজানা কষ্ট আর ভয় উত পেতে রয়েছে। 


চলবে....


(গঠনমূলক কমেন্ট চাই))


Sabriha Sadi

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !