আমার নেশা তুমি || Sabriha Sadi (সাদিয়া) পর্ব : ২

 গল্পঃ---আমার নেশা তুমি

লেখিকাঃ-Sabriha Sadi (সাদিয়া)

পর্ব : ২





গাড়ি টা বড় এক গেইটের ভেতর দিয়ে বিশাল বড় এক প্রাসাদে গাড়ি ব্রেক নিল। 


লোক টা সিটবেল খুলে গাড়ি থেকে নামে। তাড়াতাড়ি করে দরজা টা খুলে দেয় আনিসার। 

উপর থেকে এক ছায়া মানব তাদের দেখছিল। 


আনিসা ভীত পায়ে নেমে যায়। মাথা বেশ উঁচু করে প্রাসাদ ন্যায় বাড়ি টা দেখে নেয়। চারপাশের গাছে লাইট লাগানো। কি সুন্দর একটা বাড়ি। আনিসা ঘাড় গুরিয়ে দেখছিল বাসা টা। 


আনিসা নামতেই ছায়া মানব হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। 


"ম্যাম আসুন।" 

লোক টা আনিসা কে নিয়ে ভেতরে যাচ্ছে। আনিসা লোক টার পিছন পিছন তাকে অনুসর করছে। 


ইয়া বড় এক দরজা ঢেলে তারা ভেতরে গেল। ভেতরে গিয়ে আনিসা আরো অবাক হয়। এ সে কোথায় এলো? সত্যিই কোনো রাজ প্রাসাদে চলে এলো নাকি কোনো রূপ কথার দেশ এটা? এমন তো শুধু মানুষ মুভি তে কিংবা কল্পনায় দেখে। 


আনিসা মুগ্ধ হয়ে আশপাশ দেখছিল। চোখ তার ছানাবড়া হয়ে আছে। মানুষ কত টা সৌখিন আর বিলাশ বহুল হলে এমন করে নিজের বাসা সাজায় তা আনিসা হাঁড়ে হাঁড়ে  দেখছে। 


লোক টা আনিসা কে সিঁড়ি দিয়ে উপরে নিয়ে যাচ্ছে। আনিসাও কথা না বাড়িয়ে তার পেছন যাচ্ছে। 

এখানে বলার মতো তো তার কিছুই নেই। সে তো এখন নিতান্তই এক দাসী।


লোক টা তাকে নিয়ে এক বিশাল ঘরের দরজা ঠেলে ভেতরে যেতে বলল। 


অথচ সে বাহিরে থেকেই ভেতরে কাউকে বলছে,

"স্যার নিয়ে এসেছি।"

হাতের একটা ইশারা পেয়ে লোক টা কোনো শব্দ ছাড়াই চলে যায়। 


এতক্ষণ আনিসা কিছুই খেয়াল করেনি। শুধু রুমের আশপাশ দেখছিল। এই রুমে থাকলেও মনে হয় জীবন সার্থক হয়ে যাবে। রুম দেখে এমন টাই মনে করছে আনিসা। 


কারো সাড়াশব্দ না পেয়ে আনিসা দরজার বাহিরে তাকায় লোক টা কে দেখার জন্যে। কিন্তু লোক টা তখন সেখানে ছিল না। 


তাই আনিসা আরো একটু এগিয়ে যায়। সামনে পড়ে একজন পিছল ফিরে দাঁড়িয়ে থাকা মানব। তার মুখ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু সে একটা সাদা শার্ট পড়ে আছে। যতটা সম্ভব আনিসা বুঝতে পেরেছে মানুষ টা প্যান্টের প্যাকেটে হাত দিয়ে পা একটু ফাঁক করে দাঁড়িয়ে আছে। শরীরের গঠন গাঠন মাশাল্লা লাগল আনিসার। জিম বডি শার্ট বেদ করে মনে হয় বের হয়ে আসবে আসবে। পিছন দেখেই আনিসার মনে হতে লাগল এ যেন কোনো রাজপুত্র আর এটা তার রাজপ্রাসাদ। 


আনিসা অবাক হয়ে দেখছে আর ভাবছে। রূপকথার দেশে চলে এলো ও স্বপ্নে? ঘুম ভাঙ্গলেই কি সব টা আগের মতো হয়ে যাবে? 


আনিসা এক নজরে দেখছে। হঠাৎ করেই মানুষ টা আস্তে আস্তে তার দিকে ফিরল। 


আনিসার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। এই মনে হয় তার হার্টবিল ফল হবে। এই বুঝি ভেতরের জান বের হয়ে আসবে তার। ড্যাবড্যাব করে দেখছে। তার ধারণা ভুল না। এই মানব যেন কোনো রাজপুত্র থেকেও বেশি। কি সুন্দর মুখ, কি সুন্দর চেহারা, চাঁপ দাঁড়ি, হাল্কা একটু লম্বা চুল পাম করা। হল্কা লাল আভা যুক্ত ঠোঁট। যেন কমলালেবু। কত টা সুদর্শন আর মোহনীয়। আনিসা এমন সুদর্শনে পুরুষ হয়তো এর আগে দেখেনি। কখনোই দেখেনি। কোনো ছেলের দিকে এভাবে তাকানোও হয়নি তার। বুকের ভেতর ধুকবুক করা স্পন্দন ক্রমশ বাড়ছে তার। মনে হচ্ছে হার্টবিট তার কাজ করার বন্ধের বদলে বারিয়ে দিয়েছে। যেন তার মৃত্যু হয়।


লোক টা ধীর পায়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে। 


আনিসা কে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। আনিসার দুধু আলতা গায়ের রঙ এর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। মাথায় ওড়না টানা অথচ চুল এলোমেলো। চিকন লাল টকটকে ঠোঁট পানসে বর্ণ ধারণ করেছে। ডাগরডাগর চোখ তার ঘন কালো পাঁপড়ি। এই মন মাতানো সুন্দরের মাঝে কপালে লেগে থাকা রক্ত। সব মিলিয়ে আনিসার দিকে তাকিয়ে আছে মানুষ টা। খুব মনে ধরেছে তার। এক কথায় মনে গেঁথে গিয়েছে। 


মানুষ টা একদম তার দিকে চলে এসেছে। আনিসার নিশ্বাস আরো বন্ধ হয়ে আসছে। শুকনো ঢুক গিলল। এতক্ষণ এক মোহের মাঝে ছিলেও এখন ভয় হচ্ছে। 

তবুও সে সেই মোহের রেশ পুরোপুরিভাবে ছেড়ে উঠতে পারেনি। 


"আনিসা!"


মানুষটার মুখে তার নাম শুনে আনিসা বেশ অবাক হয়। এই লোক তার নাম জানে কি করে? পরক্ষনে সে ভাবে, হয়তো কিনে আনার আগে তার পিশাচ বাবার কাছ থেকে জেনেছে। আনিসা আর কিছু বলে না। তবে ভয় হয়।


মানুষটা তার আরো কাছে চলে আসে। যাকে বলে খুব কাছাকাছি। 

"আনিসা। এর অর্থ জানো?"

"....

"আনিসা অর্থ কুমারী। নামের সাথে পুরোপুরি মিল আছে। যাকে বলে পারফেক্ট। তোমার সর্ব অঙ্গে কুমারীর শ্রী দেখতে পাচ্ছি আমি। এ এক মোহ। চোখ ধাঁধালো সৌন্দর্য। সদ্য ফুটে উঠা এক ফুল।"


কথাটা শেষ করে মানুষ টা হাত দিয়ে আনিসার চিবুক উপরে তুলে। 


মুহূর্তে আনিসা কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে নেয়। দম টাও কেন যেন তার বন্ধ হয়েই আসছে। এই প্রথম কোনো পুরুষাঙ্গের সান্নিধ্যে আছে সে। 


আনিসা চাইলেও কিছু বলতে পারছে না। চুপ করে আছে। শ্বাসকষ্ট  হচ্ছে তার। 


"লজ্জা পেলে নারীদের রূপ খুলে যায়। ভয়ংকর মাধুরী বিরাজ করে তখন তাদের। তুমিও সেই দলে।"


কথাটা শেষ করেই মানুষ টা হাত সরিয়ে নেয়। আনিসা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। কারো সান্নিধ্য অনুভব না করে চোখ মেলে তাকায়। কেউ নেই। আশপাশ তাকিয়ে দেখে মানুষ টা ড্রয়ারে কিছু খুঁজচ্ছে। আনিসা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। 


মানুষটা হাতে একটা বক্স নিয়ে আনিসার হাত ধরে। টেনে সোফার কাছে নিয়ে যায়। 


ইশারা করে বসতে। কিন্তু আনিসা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। 

"বসো এখানে।"

আনিসা কিছু না বলে বসে। 


মানুষ টা বক্স থেকে স্যাভলন নিয়ে আনিসার কপালে লাগিয়ে দিচ্ছে। তারপর ছোট ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিতে দিতে বলল,

"শ্রেয়ান। আমি শ্রেয়ান চৌধুরী। কাউকে আমি আমার নাম ধরে ডাকার পারমিশন দেই না। তবে তুমি শ্রেয়ান বলেই ডাকতে পারো।"


শ্রেয়ান কথা শেষ করে আনিসার দিকে ঝুঁকে ব্যান্ডেজ লাগাতে থাকে। 


আনিসা বেশ বিস্মিত হয়। কাউ কে নিজের নাম ডাকতে দেয় না। অথচ তার থেকে কত ছোট এক মেয়ে কে বলছে তার নাম নিয়ে ডাকতে। কিন্তু কেন? আনিসা হিসাব বুঝতে পারে না। 


শরীর টা আনিসার ভীষণ খারাপ লাগছে। না খাওয়ার কারণে আরো দূর্বল লাগছে। শরীরে শক্তি আর যেন অবশিষ্ট নেই। 


"যাও গিয়ে শুয়ে পড়ো।"

শ্রেয়ান কথা টা বলে চুপ মেরে যায়। আনিসা অস্বস্তি বোধ করে চুপচাপ বসে আছে। 


শ্রেয়ান তার দিকে একটু ঝুঁকে যায়। সোফায় এক হাত রেখে আনিসার মুখের কাছে গিয়ে বলে,

"মেয়ে আমার কথা নিবে না এত। যা বলি তাই করবে। কথা না মানলে শ্রেয়ানের রাগ তোমার মতো পিচ্চি নিতে পারবে না। মাইন্ড ইট। যাও গিয়ে শুয়ে পড়ো ওখানে।"


শ্রেয়ান তার নিজের বিছানা ইশারা করে। আনিসা আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায়। 


কিন্তু তা আর পাড়ে না। ধপ করে শ্রেয়ানের উপর জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পরে। শ্রেয়ান তাড়াতাড়ি করে আনিসা কে ধরে কোমর জড়িয়ে। 


আনিসার শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর কোলে তুলে নিতে নিতে বলে,

"ও শীট আমিও কি করে এমন ননসেন্সের মতো কাজ করলাম হয়তো কিছু খায়নি। মুখ ঠোঁট দেখে তাই বুঝা যাচ্ছে। ডেমেট বোকার মতো কাজ করলাম একটা। শীট।"


আনিসা কে শুয়িয়ে দিয়ে শ্রেয়ান নিচে যায়। নিজ হাতে রান্নাঘরে গিয়ে স্যুপ বানায়। 


তার বাড়ির কাজের লোকের অভাব নেই। ৬/৭ জন আছে। কিন্তু শ্রেয়ান সবাই কে রাতে নিজ নিজ বাসায় পাঠিয়ে দেয়। এত বড় বাড়িতে সে একা থাকে। 


কাজের লোক কে কল করে আসতে বললে আসে না হলে সে রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার এনে খেয়ে নেয়। 


কিন্তু এত রাতে রেস্টুরেন্ট বন্ধ। যদিও খুলা পায় তবে দেরি হবে। 

শ্রেয়ান আর না ভেবে আনিসার জন্যে স্যুপ বানাতে থাকে। এই প্রথম হয়তো সে রান্না করল অন্য কারো জন্যে। নিজের কিছু খেতে ইচ্ছে হলে নিজে বানিয়ে নেয় না হলে রেস্টুরেন্ট আছে। 

কোনো দিন অন্য কারো পছন্দের জন্যে বা কোনো কারণে অন্যের জন্যে রান্না করেনি। এই প্রথম করল আনিসার জন্য।


গরম স্যুপের বাটি নিয়ে উপরে নিজের রুমে যায়।


আনিসা কে ডাকে আনিসা মিটমিট করে তাকায়। আনিসা কে একটু উঁচু করে বালিশ পেছনে দেয়। বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসায়। 


"হা করো।"

"....

"হা করতে বললাম।"


শ্রেয়ানের ধমকে আনিসা হা করে। শ্রেয়ান নিজ হাতে আনিসা কে সব টা স্যুপ খায়িয়ে দেয়। 


আনিসা খুব বেশিই চিন্তিত শ্রেয়ানের এমন কান্ডে। উনার মতো একজন লোক তাকে এক কোটি টাকা দিয়ে কেনই কিনল? কিনল তো কিনল তবে তাকে কেন? তার মতো একটা মেয়কেই কেন? কি আছে তার শ্রেয়ান কে দেওয়ার মতো? যদি শরীর চায় তবে উনি চাইলে অনেক মেয়ের শরীর নিয়ে খেলা করতে পারে। সেটা অতি তুচ্ছ। তার রূপে হাজার হাজার মেয়ে চলে আসবে এক ডাকে। কিনে যদি আনলই তবে কিছু না করে এত যত্ন করছে কেন? আনিসা আর কিছুই বুঝে পায় না। তার মাথায় কিছুই ডুকছে না। 


"এত কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পরো।"

শ্রেয়ানের কথায় হা করে আছে আনিসা। লোক টা বুঝল কি করে সে ভাবছে? হয়তো তার চেহারা দেখে।


আনিসা আর কথা বাড়ায় না। শুয়ে পড়ে। শ্রেয়ান তার দিকে একটু ঝুঁকে গায়ের উপর চাদর টেনে দেয়। 


"চোখ বুজো। গুড নাইট।"


শ্রেয়ান কথাটা বলে ব্যালকুনিতে চলে যায়। সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকে। 

আনিসা একবার উঁকি দেয়। চাদর টেনে ঘুমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু মনের মাঝে ভয় আশংকা থেকেই যায়। 


রাত তখন ২ টা শ্রেয়ান ব্যালকুনি ছেড়ে ভেতরে এলো। তার বিশাল বিছানায় আনিসা ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত আনিসা কে ঘুম কুমারী লাগছে। কি মায়া তার মুখে। মায়া যেন উবছে পরছে মুখশ্রী থেকে। শ্রেয়ান মোহ নিয়ে দেখছে তাকে। 


বিড়বিড় করে বলল,

"আনিসা #আমার_নেশা_তুমি। এই নেশা দুনিয়ার অন্য কোনো নেশা দ্রব্য দিয়ে কাটবে না। তোমার নেশা শুধু 'তুমি' নামক নেশা দিয়েই কাটবে আমার।"


চলবে....


(গঠনমূলক কমেন্ট চাইছি)


Sabriha Sadi

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !