গল্পঃ--- আমার নেশা তুমি
লেখিকাঃ-- Sabriha Sadi (সাদিয়া)
পর্ব : ৩+৪
পর্ব: ৩
শ্রেয়ান ছোট থেকে একা থাকে। সেই ১০ বছর বয়স তার যখন তখন থেকে একা মানুষ সে।
১০ বছর বয়সে সে তার মাকে হারায়। তার জন্যে তার বাবাই দায়ী। সে ভাবে তার বাবা তার মা কে পরোক্ষ ভাবে খুন করেছে।
বুঝবান হওয়ার পর থেকে সে দেখেছে তার মা বাবা কারণে অকারণে ঝগড়া করতে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে দেখা যেত তার বাবা তার মাকে প্রচন্ড রকম ভাবে মারধোর করত। জখম করে দিত। এমনো হয়েছে তার মা চোখে ৯/১০ দিন দেখতেই পেত না। এলোপাথাড়ি মারার ফলে চোখের মাঝে বেতালা কিল ঘুষি দেওয়ার কারণে এতটাই ফুলত আর রক্ত জমা হয়ে যেত যার কারণে তিনি চোখেই দেখতে পেতেন না। সেদিনও খুব ঝগড়া করেছিল, ভয়ংকর ভাবে মেরেছিলও। তারপর শ্রেয়ানের মা ঠিক করেই নেয়। আত্মহত্যা করে গলায় দড়ি দিয়ে।
আর সে দিনের পর থেকে বাবা কে শ্রেয়ান সহ্য করতে পারে না। মায়ের খুনি ভাবে।
শ্রেয়ানের বাবা তার মাকে তেমন পছন্দ করত না। যার কারণে তার সাথে উঠতে বসতে লেগে যেত। রাগলে মারধোর করত। এটা যেন রুটিন হয়ে গিয়েছিল।
শ্রেয়ানের বাবা তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে বিদেশে অবস্থান করছে। মাঝে মাঝে তিনি শ্রেয়ান কে কল দেয়। কিন্তু সে ইচ্ছা করেই ধরে না। ধরলেও বাবা কে কথা শুনিয়ে বসে সে বিজি আছে। তারপর কল কেটে দিয়ে মায়ের স্মৃতিতে বিলিন হয়ে যায়। কখনো কখনো গগন ফাটানো চিৎকার দিয়ে কান্না করে।
শ্রেয়ানের খরচ তার মায়ের ভাগে পাওয়া সম্পত্তি দিয়ে চলছিল। তার নানাভাই মারা গিয়েছে আরো আগে। নানাভাই তার মাকে যে সম্পত্তি দিয়েছিল তা এখন শ্রেয়ানের।
বড় হয়ে নিজের চেষ্টায় এত বড় বিজনেসম্যান হিসেবে পরিচিত হয়েছে। দেশে বিদেশে এক নামে সবাই চিনে "শ্রেয়ান চৌধুরী।"
ছোট থেকে একা থাকতে থাকতে আর নিজেই নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে শ্রেয়ান এক রগচটা মানব। এক ঘেয়ো আর ভীষণ জেদি খুব রাগিও বটে। এক বার যেটা ঠিক করে সেটা করেই ছাড়ে। রাগ উঠলে সে নিজের মাঝে থাকে না। অফিসের সবাই তার রাগের জন্যে বাঘের মতো ভয় পায়। কাজের প্রতি বেশ মনোযোগী। তাই সব স্টাফ নিজের সব টা দিয়ে কাজ করে। না হলে চাকরি যেতে ১ মিনিটও লাগবে না।
শ্রেয়ান খুব নেশা করে। এমন দিন তার যায় না সে নেশা করেনি। প্রতি দিন নেশা করে। কারণ বাঁধা দেওয়ার মতো কেউ ছিল না।
নেশায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে চায় সব টা সময়। যেন তার কষ্ট না থাকে জীবনে।
তবে শ্রেয়ান চৌধুরী আজ ড্রিংক করে নি। করে নি বললেও ভুল হবে। করেছে তবে এ নেশা অন্য নেশা। কুমারী "আনিসা" এর নেশায় মত্ত ছিল শ্রেয়ান।
আনিসা ঘুমিয়েছে আর সারা রাত শ্রেয়ান বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে দৃষ্টি নেশা করেছে। এক মনে ধ্যানে আনিসার দিকে তাকিয়ে ছিল।
এ যেন তার কাছে দুনিয়ার সব চেয়ে বড় নেশা। এই নেশার কাছে বাকি নেশা দ্রব্য নগণ্য হতে অতি নগণ্য।
শ্রেয়ান "আনিসা" নেশায় আসক্ত হয়ে পরেছে। যার ফলে বাকি নেশা নেওয়ার কথা সে বেমালুম ভুলে বসে আছে।
সারা রাত শ্রেয়ান আনিসা কে দেখছিল। এটাই নেশা। সব চেয়ে বড় নেশা। এ নেশা ধরলে ছাড়তে চায় না। রেশ যেন তার থেকেই যায়। এই নেশায় পরে গেলে মাতলামো করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। কারণ এই নেশা দুনিয়ার সেরা নেশার ১ম তম জায়গায় বসে আছে।
শ্রেয়ান "আনিসা" নেশায় ভুদ হয়ে থাকলেও একবার তার কাছে যায় নি। ছুঁয়ে দেখে নি। তবে কপালের চুল, চিকন ঠোঁট আর চোখের ঘন কালো পাঁপড়ি তাকে খুব টানছিল।
তবুও সে যেন নড়তে পারছিল না। ঠাই দাঁড়িয়ে শুধু দেখে যাচ্ছিল।
আনিসার মুখে গরম রোদের ঝিলিক পরতেই মিটমিট করে তাকায়। উঠে বসে শরীর মুচড়াতে থাকে। সামনে দেখা যাচ্ছে শ্রেয়ান দাঁড়িয়ে আছে।
বিছানা পিছল করে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। কাঁচের দেওয়াল দিয়ে রোদ দেখা যাচ্ছে। সে মিষ্টি আভা দিয়ে সকল কে আরেক টা নতুন সকালের আগমনের জানান দিচ্ছে।
শ্রেয়ান কাঁচের দেওয়ালে দেওয়া ইয়া বড় পর্দা টেনে আনিসার দিকে মুখ ফিরে তাকায়। আনিসার চোখ আটকে আছে। ধাঁধালো ঝিলিক দিচ্ছে শ্রেয়ান।
কাঁচের দেওয়াল থেকে রোদের সব টা আভা শ্রেয়ানের চারিপাশে বিরাজ করছে। শ্রেয়ান যেন অদ্ভুত এক শক্তির উৎস। মনে হচ্ছে তার শরীর থেকেই সূর্য কিরণ দিচ্ছে। মুখ যেন মোহনীয় লাগছে শ্রেয়ানের।
শ্রেয়ান ধীর পায়ে আনিসার দিকে এগিয়ে এলো।
"উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও। বের হবো।"
".....
আনিসা কিছু না বলে ড্যাবড্যাব করে দেখছে।
"পিচ্চি কি বললাম? যাও রেডি হয়ে নাও।"
"....
আনিসা কি বলবে? তার বলার কি আছে? ফ্রেশ হয়ে কোথায় যাবে? শ্রেয়ানের সাথে? শ্রেয়ান কি তাকে কোথায় নিয়ে মেরে ফেলবে নাকি অন্য কারো কাছে বিক্রি করে দিবে? এমন তো হয়েই থাকে।
"আনিসা, আনিসা."
শ্রেয়ানের ঝমকালো কন্ঠ শুনে আনিসা তার দিকে তাকায়।
"হোয়াট হ্যাপেন?"
"....
"আনিসা আমি তোমায় কিছু বলছি তো।"
শ্রেয়ান দাঁত কিড়িমিড়ি করে কথা টা বলে। ভয়ে আনিসা বলতে থাকে,
"আ আপনি আমায় কোথায় নিয়ে যাবেন?"
"....
"আমায় অন্য কারো কাছে বিক্রি.. "
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই শ্রেয়ান রাগে আনিসার দিকে তেড়ে যায়। আনিসা বিছানা তেই বসা ছিল। আনিসার দুই পাশে হাত রেখে শ্রেয়ান তার দিকে একটু ঝুঁকে দাঁত কিড়িমিড়ি করে বলে,
"বিক্রি মাই ফুট। ফারদার এটা যেন তোমার মুখ থেকে আমি না শুনি। মেয়ে তোমায় আগেও বলেছি আমায় রাগ তুলাবে না। তার পরিণতি খুব একটা সহজ হবে না। তাই যা যা বলব তাই করবে। কথা গুলি মনে রেখো। যাও ফ্রেশ হয়ে আলমারির থেকে বোরকা টা পড়ে রেডি হয়ে নাও।"
শ্রেয়ান গরগর করে কথা গুলি বলে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। আনিসা ড্যাবড্যাব করে শুধু দেখে গেলো।
অনেকক্ষণ পর নিচ থেকে শ্রেয়ানের গলা শুনা যাচ্ছে। আনিসা কে ডাকছে।
"আনিসা আনিসা।"
"....
আনিসা চুপ করে ঘর থেকে বের হয়। উপরে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে দৃষ্টি দেয়।
"নিচে আসো।"
শ্রেয়ানের কথায় আনিসা চুপচাপ নিচে নামে।
শ্রেয়ান একটা চেয়ার টেনে দেয়।
"বসো এখানে।"
আনিসা কথা অনুযায়ী বসে।
"এই গুলি খেয়া নাও।"
".....
"কি হলো? বললাম তো খেয়ে নিতে।"
"আ আমার খিদে নেই।"
"হোয়াট?"
"....
"আনিসা আমার মাথা গরম করবে না। চুপ করে খেয়ে নাও।"
আনিসা ভাবতে থাকে, লোকটা পাগল টাইপ। খুব বেশিই রগচটা আর রাগি। আনিসা তবুও চুপ করে বসে আছে।
শ্রেয়ান আনিসার মুখ চেঁপে ধরে অন্য হাতে খাবার মুখে তুলে দেয়।
আনিসা হা হয়ে আছে। একে একে তিন বার এমন করে খাবার তুলে দেয় আনিসার মুখে। আনিসা খেতে পারছিল না। মুখ ভর্তি খাবার। হঠাৎ বিষম খায়।
শ্রেয়ান তাড়াতাড়ি করে পানির গ্লাস এগিয়ে ধরে আনিসার মুখের সামনে।
"আনিসা আর ইউ ওকে?"
"....
"আনিসা ঠিক লাগছে তো এখন?"
"হুম।"
"শান্ত ভাবে খেয়ে নাও তো পিচ্চি।"
আনিসা ভয় ভয় মুখ নিয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে নেয়। তারপর শ্রেয়ান বলে,
"এবার যাও। আলমারি থেকে বোরকা টা নিয়ে পড়ে ফেলো।"
".....
"এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? কি ভাবছো? মেবি বোরকা টা কার এটাই তো?"
শ্রেয়ান আনিসার মনের কথা বলায় সে অবাক হয়।
"আসলে এটা অনেক আগে কিনেছিলাম। কেন কিনে ছিলাম মনে নেই। জাস্ট কিনতে মন চেয়েছিল তাই কিনেছিলাম। এর বেশি কিছু না। কারণ আমার বাসায় কোনো লেডি নেই। এখন থেকে শুধু তুমি থাকবে।"
আনিসা কি বলবে এখন? সে এখানে থাকবে কোন কারণে? ভয় সরিয়ে সাহস নিয়ে বলেই দিল,
"আ আমায় কেন কিনে এনেছেন বলবেন?"
শ্রেয়ান যেন রেগে যায়। তার সহস সরল চেহারা টা মুহূর্তেই কালো হয়ে যায়। বুঝায় যায় সে রেগে গেছে।
দাঁত কিড়িমিড়ি করে বলে,
"আমায় প্রশ্ন করছো তুমি? আনিসা শ্রেয়ান চৌধুরী কারো প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নয়। এটা আমি পছন্দও করি না। এমন ভুল আর করো না। আর একটা কথা, কখনো বলবে না কিনার কথা। কথাটা প্লিজ ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নাও। এখন যাও যা বললাম তাই করো।"
আনিসা ভয়ে তাড়াতাড়ি উপরে চলে যায়। এমন মানুষের সাথে কি থাকা যায়? সাইকো টাইপের লোক।
আনিসা আলমারি থেকে বোরকা টা হাতে নেয়। বেশ দামি বোরকা। নিচ থেকে শ্রেয়ানের গলা শুনা যাচ্ছে। তাই সে তাড়াহুড়া করছে।
একটু পর নিচ থেকে শ্রেয়ান নিজেই উপরে চলে এলো।
আনিসা তখন বোরকার স্কার্ফ পড়ে নিচে নামবে। শ্রেয়ান হা হয়ে দেখছে। সাদা বোরকা আর স্কার্ফ থেকে আনিসার ঘন কালো পাঁপড়ি যুক্ত চোখ গুলি দেখা যাচ্ছে। আনিসার নেশা ভরা চোখ দেখেই শ্রেয়ানের অন্যরকম অনুভূতি হতে লাগল।
শ্রেয়ান ঘোর লাগানো চোখ নিয়ে আনিসার দিকে এগিয়ে আসছিল।
আনিসা এক অজানা ভয়ে আছে। বুকের ভেতর খুব ভয় লাগছে। শ্রেয়ান এই ভাবে তার দিকে এগিয়ে আসছে কেন? সে খুব অস্বস্তি বোধ করছিল।
শ্রেয়ান মৃদু পায়ে আনিসার খুব কাছে চলে এলো। আনিসার বুকে এক ভয় আরো বেড়ে গেল। সে শুধু শুকনো ঢুক গিলছে।
শ্রেয়ান খুব কাছ থেকে আনিসা কে দেখছিল। আনিসার চিবুক উপরে তুললে আনিসা ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।
শ্রেয়ান কে আনিসার খুব ভয় লাগে। লোক টা হুটহাট তার কাছে চলে আসে। ভয়ে তার আত্মা শুকিয়ে যায়। চোখ মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে আছে। শ্রেয়ান মোহ নিয়েই আনিসা কে দেখছে।
হঠাৎ তার মুখ থেকে শুধু এটাই বের হয়ে এলো।
"নেশা।"
কথাটা শুনা মাত্র আনিসা চোখ মেলে শ্রেয়ানের দিকে তাকায়। শ্রেয়ান শুধু "কাম" বলেই আনিসার হাত ধরে টেনে নিচে নিয়ে যেতে লাগে।
.
.
.
.
.
পর্ব: ৪
আজ আর শ্রেয়ানের অফিস যাওয়া হলো না। বলতে গেলে সে ইচ্ছা করেই আজ অফিস যায় নি।
কি করতে হবে শুধু ম্যানেজার কে বলে দিয়েছে কল করে।
শপিং করে শ্রেয়ান দুপুরের খাবার নিয়ে বাসায় চলে এসেছে। তার নিজের জন্যে কিছুই কিনল না। যা কেনার এত এত কাপড় জুতা সব আনিসার জন্যে কিনেছে শ্রেয়ান।
সারা টা শপিং করার সময় আনিসা শুধু শ্রেয়ান কে দেখেছে আর বিস্মিত হয়েছে।
লোক টা মাঝে গভীরতা নামক জিনিস টা উবছে উবছে পরছে। মানুষ টা কে দেখে কিছু বুঝার জো নেই। কেন তাকে ওই নরক থেকে এত দামে কিনে আনল। কেনই বা এত যত্ন নিচ্ছে এত দামি দামি তার জন্যে জিনিস কিনছে? আবার বিক্রির কথা বললে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।
শ্রেয়ান উপরের দিকে যেতে যেতে বলল,
"রুমে গিয়ে বোরকা খুলে ফ্রেশ হয়ে নিবে। আমি পাশের রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসছি।"
".....
শ্রেয়ান আনিসার কথার জবাব আশা না করেই উপরে চলে গেল। মেয়ে টা বড্ড কম কথা বলে।
আনিসা বোরকা খুলে ফ্রেশ হয়ে নেয়। শপিং থেকে কিনে আনা মেরুন রং এর ড্রেস টা পড়ে নেয়। তারপর ভেজা চুল ছেড়ে দিয়ে মাথার উপর ওড়না টেনে দেয়।
ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে আছে। দমকা বাতাসে মাথায় দেওয়া ওড়ানাটা বারবার খসে পরছে। আনিসা বার কয়েক ওড়না টেনে দিয়েও এখন চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। মাথায় ওড়না দেওয়ার কোনো তাড়া এখন তার নেই।
লম্বা চুল গুলি কোমর ছাড়িয়ে আছে। ভেজা চুল দিয়ে টুপটুপ করে নিচে পানি পড়ছে। আনিসার ড্রেস টা কোমরের দিকে অনেক টা ভিজে আছে।
শ্রেয়ান তাকে হঠাৎ খাবারের জন্যে ডাকতে এসে এই রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হলো।
বড্ড কাছে টানছে আনিসার লম্বা ভেজা চুল তার উপর ভিজে যাওয়া ড্রেস টাও। কেমন ঘোর লাগানো দৃশ্য।
শ্রেয়ান যেন নিজেকে সামলাতে পারছে না। চোখ ছানাবড়া হয়ে আছে। অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে খুব লম্বা একটা নিশ্বাস ছেড়ে দেয়। ডান হাত দিয়ে কপাল ডলতে থাকে। তারপর মাথা এমনি ঝাঁকাতে থাকে।
এ যেন এক মোহে পরে যাচ্ছে শ্রেয়ান। এই মোহে সম্পূর্ণ পরে গেলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা তার কাছে অধিক। আর সে এখন কোনো রকম দুর্ঘটনা ঘটাতে ইচ্ছুক নয়। সময় চাই। তাই নিজেকে ঠিক করে সামলে নেওয়ার চেষ্টাটুক করছে।
কেউ একজন যে মোহতা মিয়ে আনিসার দিকে তাকিয়ে আছে তার সেদিকে খেয়াল নেই।
শ্রেয়ানের গলা লেগে আসছিল। তবুও অস্পষ্ট কন্ঠে বলল,
"আনিসা।"
শ্রেয়ানের টের পেয়ে আনিসা পিছন ফিরে দ্রুত মাথার উপর কাপড় টেনে নেয়। তার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
"আ আপনি?"
"....
"কখন এলেন?"
"তাড়াতাড়ি নিচে আসো খাবে।"
শ্রেয়ান হনহন করে ঘর থেকে বের হয়ে এলো। আনিসার খিদে পেয়েছে তাই সেও নিচে যাওয়ার জন্যে প্রস্তুতি নিয়ে নিল।
টেবিলে আনিসা আর শ্রেয়ান মুখোমুখি বসে আছে। আনিসা মাথা নিচু করে আছে। শ্রেয়ান তাকে দেখছে।
আগে খেয়াল না করলেও এখন শ্রেয়ান খেয়াল করছে ফর্সা গায়ে মেরুন রং টা আনিসা কে বেশ মানিয়েছে। বেশ লাগছে পিচ্চি আনিসা কে।
টেবিলে এতো এতো খাবার রাখা। আনিসার সামনে ভাতের সাথে কি কি যেন প্লেটে সাজিয়ে রাখা আছে। আনিসা হয়তো এ গুলি কোনো দিন দেখেও নি। কি নাম তাও জানে না। আনিসা ফ্যালফ্যাল করে দেখছে। তবে খাবার গুলি দেখতে তার লোভনীয় লাগছে। সাথে একটা ছুড়ি কাটা চামচ। আনিসা সে গুলির দিকেও তাকিয়ে আছে।
ভাত কি কেউ কাটা চামচ ছুড়ি দিয়ে খায় নাকি? সে ভাবতে থাকে এ কেমন খাবার?
আনিসার চাওনি দেখে শ্রেয়ান বুঝতে পারছে আনিসা এই খাবার আগে দেখেনি। তাই এমন করে তাকিয়ে আছে। শ্রেয়ান আনিসার ভাব দেখে মনে মনে হাসে। মুখেও ঠোঁট চেঁপে রেখেছে।
আনিসার খুব খিদে লেগেছে কি করবে কি বলবে শ্রেয়ান কে বুঝতে পারছে না। ও দিকে খিদের ট্রেন তো ছুটেই চলছে।
আনিসা খিদের জ্বলায় কাঁপা হাতে ছুড়ি টা নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। কি করবে এটা দিয়ে কি ভাবে খাবে? আনিসা না পেরে ছুড়ি টা গোশতের উপর চালায়। কিন্তু সে পারছে না। কাটা চামচ নিয়ে গোশতের উপর বিঁধিয়ে দেয়। তা উপরে তুলে আবার দেখতে থাকে।
আনিসার এই কান্ড দেখে শ্রেয়ান দাঁত বের করে ফিক করে হাসি দেয়। তবে তেমন কোনো শব্দ করে না।
আনিসা হাত দিয়ে ভাত মুখে নেয় তারপর কাটা চামচে বিঁধ করা গোশত টেনে ছিঁড়ে। শ্রেয়ান আনিসার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে আর নিজের প্লেটে ছোট ছুড়ি দিয়ে গোশত আর মাছ পিস পিস করে কাটতে থাকে।
আনিসা খাচ্ছে তো খাচ্ছে। এক সুদর্শন পুরুষ যে তার সামনে আছে তার দিকে তাকিয়ে আছে সে দিকে তার খেয়াল নেই। সে হাত দিয়ে চামচে লাগিয়ে রাখা গোশত দাঁত লাগিয়ে খাওয়া শুরু করেছে।
শ্রেয়ান কিছু না বলে আনিসার প্লেট টা হাত দিয়ে সরিয়ে নেয়। আনিসা ভয়ে শ্রেয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।
শ্রেয়ান নিজের প্লেট আনিসার দিকে এগিয়ে দেয়। আনিসা মুচকি হাসে।
আনিসা আবার খাওয়ায় মন দিলে শ্রেয়ান উঠে দাঁড়ায়। আনিসা খাওয়া রেখে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। শ্রেয়ান অন্য দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে আসে। তারপর আনিসার দিকে তাকায়।
আনিসা শ্রেয়ানের হাসি তে ফেঁসে গেছে। শ্রেয়ানের হাসি দেখে সে হা হয়ে আছে। কি সুন্দর করে মানুষ টা হাসতে জানে।
শ্রেয়ান আনিসার দিকে একটু ঝুঁকে আনিসার ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা ঝোল টা মুছে আবার নিজের জায়গায় বসে। আনিসা শ্রেয়ানের দিকে তাকিয়ে ঢুক গিলে।
"খেয়ে নাও।"
শ্রেয়ানের কথায় আনিসা সেই ঘোর থেকে ফিরে। শ্রেয়ানের দিকে তাকিয়ে ঘন চোখের পাঁপড়ি ফেলে।
তারপর চুপ করে খাওয়া শেষ করে নেয়।
"আমার পাশের রুমে গিয়ে শুয়ে ঘুমাও এখন।"
"....
"আনিসা। যাও।"
"হুম।"
শ্রেয়ানের কথায় আনিসা চুপ করে সেই রুমে চলে যায়। কিন্তু তার ঘুম আসে না। ধীর পায়ে ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে থাকে। তার মনে হাজার প্রশ্ন আর কষ্ট।
মা কে যে তার খুব মনে পারছে। উনি কত ভালোবাসত তাকে। নরপিশাচ বাবা কে মনে পরছে তার। কিন্তু সে মনে কারতে চায় না। সেই মানুষ টা কে একদম ভুলে যেতে চায় আনিসা।
যে কি না টাকার জন্যে তাকে বিক্রি করে দিয়েছে অন্য এক লোকের কাছে।
শ্রেয়ান? সেও বা কি চায়? তাকে কিনে এনে এতো যত্ন করছে কেন? যেন কিনে আনে নি। খুব আপন মানুষ তার। মনে মনে শ্রেয়ান কে খুব ভালো লাগে আনিসার। কিন্তু রাগ? সে তো রেগে গেলে এক জটিল মানুষে পরিণতি হয়ে যায়।
"আনিসা।"
শ্রেয়ানের ডাকে সে পিছন ফিরে।
"আপনি? আ আসুন।"
বলতে বলতে একটু এগিয়ে আসে সে।
"যাই হোক আনিসা পাখির মুখে বুলি ফুটেছে।"
"....
"তোমাকে না ঘুমাতে বলেছিলাম?"
"আ আসলে ঘুম আসছিল না।"
"ওও। ওকে। তো এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?"
"এমনি।"
"মন খারাপ?"
"....
আনিসা ফ্যালফ্যাল করে শ্রেয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।
"তোমার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে তোমার মন খারাপ।"
"না আ আসলে মা কে.."
"মা কে মিস করছিলে তাই তো?"
"হুম।"
"মা মিস করার মতোই একজন।"
"....
"জানো আমিও আমার মা কে মিস করি। খুব বেশি মিস করি। ঠিক কত টা বলে বুঝাতে পারব না।"
আনিসার এখন মনে হলো, সত্যিই তো উনার মা বাবা কোথায়? এত বড় বাড়ি তে না আছে মা না আছে বাবা আর না অন্য কেউ একজন। এই বাড়ি তে একা থাকতে উনার কি কষ্ট হয় না?
আনিসা ভাবছে শ্রেয়ান কে কি জিজ্ঞেস করবে তার বাবা মা কোথায়? পরে যদি রেগে যায়?
তাই আনিসা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আনিসার পাশে ব্যালকুনিতে গিয়ে শ্রেয়ান আকাশের দিকে মুখ করে আছে। মাকে আজ সে আসলেই খুব মিস করছে।
চলবে....


