আমার নেশা তুমি || পর্ব : ৫+৬ || Sabriha Sadi (সাদিয়া)|| RS-Story24

 গল্পঃ--- আমার নেশা তুমি

লেখিকাঃ-- Sabriha Sadi (সাদিয়া)

পর্ব : ৫+৬



পর্বঃ ৫

নীরবতা ভেঙ্গে শ্রেয়ান আনিসার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

"চুপ করে কি ভাবছো? এত বড় বাড়ি তে আমি একা কেন থাকি?"


আনিসা অবাক হয়। মানুষের মনের কথা বলতে পারার অদ্ভুত এক ক্ষমতা আছে লোক টার মাঝে।  


"আ আপনার মা বাবা.."

"নেই।"

"....

"মা নেই। বাবা থেকেও নেই।"


আনিসা ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। থেকেও নেই মানে? কৌতূহল নিয়ে বলেই দিলে,

"মানে?"

"মানে মা মারা গেছে সেই আমি ১০ বছরের সময়। বাবা কে হারিয়েছি তখন থেকেই। এমন না যে বাবা বেঁচে নেই।"


কথাটা শেষ করে শ্রেয়ান আনিসার দিকে তাকিয়ে মেকি এক হাসি দেয়। আনিসা বিষয় টা বুঝতে পারে না। শ্রেয়ান ব্যালকুনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আনিসাও তার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় রেলিং এ হাত রেখে। 


"আপনার কথা আমি বুঝালাম না।"

"বাবার ঝগড়া আর অশান্তির কারণে মা সুইসাইড করে। বাবা এখন তার নতুন ওয়াইফ কে নিয়ে বিদেশ থাকে। তাই আমি একা। নিঃসঙ্গ একা জীবন কাটাই।"


শ্রেয়ানের কথাটা আনিসার বুকে লাগে। তারমানে তার মতোই শ্রেয়ানও কষ্টে আছে। লোকটার তো আরো বেশি কষ্ট। এত বড় হয়েছে বাবা মা ছাড়া। 


শ্রেয়ান রেলিং এ রাখা আনিসার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নেয়। আকাশের দিকে তাকিয়ে করুণ সুরে বলে,

"কেউ নেই। আমার কেউ না। আমি একা। বড্ডা একা।"


আনিসার ভেতরে কেমন কেমন লাগে। শরীর কেমন হীম শীতল হয়ে আসছে। একে তার হাত এক টা ছেলের মুঠোয়। আরেক হলো শ্রেয়ানের করুণ মাখা কষ্টের কথায়। ভেতরে কিছু হচ্ছে আনিসা তা বুঝতে পারছে। 


শ্রেয়ানের কল বেজে উঠলে শ্রেয়ান আনিসার হাত ছেড়ে দেয়। 

"তুমি থাকো। কিছু লাগলে আমায় ডাক দিবে। আসছি।"


শ্রেয়ান ফোন রিসিভ করে কথা বলতে বলতে চলে গেল। আনিসার শরীর টা ভালো লাগছে না। ম্যাচম্যাচ করছে। তাই সে বিছানায় চলে যায়। 


শ্রেয়ানের ডাকে তার ঘুম ভাঙ্গে সন্ধে সাত টায়। 

"আনিসা আনিসা তাড়াতাড়ি নিচে এসো। নাস্তা খাবে।"

আনিসা উঠে হাত মুখ গুলি ধুয়ে নেয়। নিচ থেকে শ্রেয়ানের আবার ডাক শুনা যায়। তাই হাত মুখ না মুছেই নিচের দিকে ছুটে। 


আনিসা তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে হুড়মুড়িয়ে শ্রেয়ানের উপর গিয়ে পরে।


শ্রেয়ান তখন সিঁড়ির ধারেই দাঁড়িয়ে আনিসা কে ডাকছিল। 


আনিসা ছুটে আসতে গিয়ে পায়ের সাথে পা বারি খেয়ে গিয়ে পরে শ্রেয়ানের উপর। হঠাৎ তার উপর আনিসা চলে আসায় সে একটু বেতাল হয়ে যায়। যার ফলে আনিসা কে নিয়ে কয়েক পা পিছনে চলে যায়। 


আনিসা ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে আছে। 


আস্তে করে চোখ খুলে দেখে শ্রেয়ান মাতাল করা চাওনি দিয়ে আবদ্ধ করে রেখেছে তাকে। শ্রেয়ান মারাত্মক মোহে পৌঁছে গিয়েছে। আনিসার মুখের উপর গুটাগুটা পানির কণা লেগে আছে। ঘন কালো চোখের পাঁপড়ি গুলি পানি তে এক হয়ে মিশে আছে। আনিসার সামনের ভেজা চুল গুলি কপালে ঠাই হয়ে আছে। ঠোঁট কাঁপছে। ভয়ার্তক মুখ খানি শ্রেয়ানের বুকে ঝড় তুলে দিচ্ছে। 


আনিসা শ্রেয়ানের এই চাওনি দেখে চুপ করে আছে। ধুকবুক স্পন্দন হচ্ছে। 


শ্রেয়ান কি করবে বুঝে পায় না। নিজেকে সামলে রাখাটা তার খুব দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার বুকে হাজারো ইচ্ছে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। 

পরক্ষনে মনে একটাই কথার উদয় হলো, একটা অবিবাহিত মেয়ের সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু করা ঠিক হবে না। 


শ্রেয়ান আনিসা কে ছেড়ে দিয়ে দূরে দাঁড়ায়। দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে বলল,

"আনিসা আর ইউ ওকে?"

"হুম।"

"চলো খাবে।"


শ্রেয়ান আর আনিসা নাস্তা করে নেয়। আনিসা টিভি তে কার্টুন দেখছিল। আর শ্রেয়ান ল্যাপটপে কাজ করছিল। আনিসা একা একাই মিটিমিটি হাসছে। 

শ্রেয়ান আড়চোখে সেই মুক্তো ঝরা হাসি দেখছে। মেয়ে টার মাঝে আসলেই "নেশা" আছে। না হলে বার বার টানে কেন তাকে? এত টা কি অন্য কেও টানে। নিজেই কথা টা ভেবে শ্রেয়ানের রাগ হয়। 


"না আর কারো নয়। ওর মাঝে শুধু শ্রেয়ানের বিচরণ চলবে। শুধু শ্রেয়ান চৌধুরীর।" 


রাতে খাবার খেয়ে দুজন দুই রুমে চলে যায়। শ্রেয়ান তার নিজের রুমে আর আনিসা শ্রেয়ানের পাশের রুমে। 


রাত তখন ১২ টা বাজে। আনিসার দরজায় টুকা পরে। আনিসা ভয় পেয়ে যায়। সে সজাগ ছিল। চোখে ঘুম নেই তাই ব্যালকুনিতে ছিল। এই বাড়ি তে তো সে আর শ্রেয়ান ছাড়া কেউ নেই। এত রাতে শ্রেয়ান ছাড়া আর কেউ ডাকবে না তাকে এটাই স্বাভাবিক। আনিসার ভয় বাড়তে থাকে। এত রাতে শ্রেয়ান তাকে ডাকবে কেন? 


আনিসা কাঁপা হাতে দরজা খুলতেই শ্রেয়ান তার উপর এসে পরে। শ্রেয়ান ড্রিংক করেছে। আনিসা বেশ বুঝতে পারছে। 


তার উপর শ্রেয়ান এই ভাবে পড়ায় আনিসার অস্বস্তি হচ্ছে আবার বেশ ভয়ও লাগছে। আনিসা শ্রেয়ান কে নিজের থেকে সড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু শ্রেয়ান তো তাকে ঝাপটে ধরে রয়েছে। আনিসা কিছুই বুঝতে পারছে না। কি করবে এখন? 


তবুও ধাক্কা দিয়েই যাচ্ছে শ্রেয়ান কে। জোরছে এক ধাক্কা দিয়ে আনিসা শ্রেয়ান কে দূরে সরায়। 


শ্রেয়ান বেতাল হয়ে দূরে ছিঁটকে যায়। 


"আ আপনি এখানে কেন?"

".....

"আপনি ম মদ খেয়েছেন?"

"ইয়েস। হোয়াট'স ইউর প্রবলেম?"

"মানে আপনি নেশাখোর?"

"আমি নেশাখোর। আমি শুধু তোমার নেশা নিতে চাই। শুধু তোমার নেশা।"

".....


আনিসা বাকরুদ্ধ হয়ে শুধু শুনছে। লোকটা কি বলছে? নেশার ঘোরে বলছে টা কি উনি? 


আনিসা নেশাখোর মানুষ কে অপছন্দ করে বড্ড অপছন্দ করে। শ্রেয়ান কেও বড্ড অপছন্দ করতে চাইছে কিন্তু কেন যেন পারছে না সে। তবুও তার ভালো লাগছে না এখন। 


"আনিসা প্লিজ আমি তোমার নেশা চাই। প্লিজ।"

"কি বলছেন টা কি? আপনি আপনার রুমে যান।"

"নো।"

"কাল কথা হবে। আপনি যান।"


শ্রেয়ান নেশার ঘোরে আনিসার কাছে আসে। আনিসার দুই বাহু ধরে শক্ত করে। 

"আনিসা তুমি আমার নেশা। দুনিয়ার সব চেয়ে বড় নেশা তুমি আমার।"


আনিসা হা হয়ে আছে। চুপ করে শ্রেয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। শ্রেয়ানও আনিসার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। 

নেশার মাঝে থেকেও শ্রেয়ান আনিসা কে ছেড়ে দিয়ে দূরে চলে যায়। 


আনিসার হাত টেনে আনে বিছানার দিকে। 


আনিসা কে বিছানায় এনে বসায়। তারপর ধপ করে আনিসার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে গুটিশুটি হয়ে। 


শ্রেয়ানের এহেন কাজে আনিসা বেশ হতবাক। আনিসার হাত টা শ্রেয়ান নিজের মাথার নিচে দিয়ে শুয়ে আছে। হাত শক্তে আকঁড়ে ধরে রেখেছে। 


হঠাৎ শ্রেয়ান হুহু করে কেঁদে উঠে। আনিসার কোলে শুয়ে আনিসার হাত টা জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। 

"প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না। আমি বাঁচব না। প্লিজ।"


এমন কথা বলছে আর শ্রেয়ান কান্না করছে। বারবার ছেড়ে না যাওয়ার কথা বলে আনিসার হাত আরো শক্তে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে মানুষটা। 


লোকটার মাঝে গভীরতায় টুইটুম্ভুর। 


আনিসার কেমন লাগছে। নিঃসঙ্গতা থেকে কথা গুলি বলছে নাকি উনি তাই ভাবাতে থাকে আনিসা কে। শ্রেয়ানের প্রতি বড্ড টান অনুভব করছে। ব্ড্ড মায়া লাগছে আনিসার। অদৃশ্য এক অজানা টান যেন আনিসার হচ্ছে শ্রেয়ানের জন্যে। 


আনিসা পলক হীন দেখে চলছে শ্রেয়ান কে। মানুষ টা আসলেই মোহনীয়। 

একজন পুরুষ কে এই ভাবে কখনোই দেখা হয় নি আনিসার। আনিসা শ্রেয়ান কে ঘুটিয়ে ঘুটিয়ে দেখতে লাগল। 


কিন্তু শ্রেয়ানের এই মদ খাওয়া টা আনিসার বেশ রুচি তে লাগে। বিষয়টা তার একদমই ভালো লাগেনি। 


তবুও যেন সে শ্রেয়ানের মাঝে কিছু একটা খুঁজে চলছে। 


.

.

.

.

.

.

.


পর্বঃ ৬

সকালের ঘুম ভাঙ্গতেই শ্রেয়ান মিটিমিটি তাকায়। 


চোখ মেলে দেখতে পায় আনিসার মুখ টা। খাটে হেলান দিয়ে বসে ঘুমাচ্ছে। তার এক হাত শ্রেয়ানের মাথার নিচে আরেক হাত মাথার উপরে। 


শ্রেয়ান এবার খেয়াল করল সে আনিসার রুমে। বড় কথা আনিসার কোলে শুয়ে আছে। তার মানে সারা রাত সে এখানেই ছিল?

কাল রাতে খুব বেশি ড্রিংক করেছিল। আনিসার মুখ চোখের সামনে ভাসছিল আর একটা একটা গ্লাস শেষ করছিল সে। 


তার পর কি হয়ে ছিল তার মনে নেই। তবে কি আনিসার সাথে কিছু.. 


শ্রেয়ান কিছু একটা ভেবে তাড়াতাড়ি করে উঠে যায়। তারপর খেয়াল করে দেখে না সব কিছু ঠিকঠাক আছে। কিছু অগোছালো নেই। এটা দেখে শ্রেয়ান একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ে। 


তারপর তার নজর যায় আনিসার দিকে। বিছানার মাথায় কিভাবে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। তার জন্যে হয়তো ভালো করে ঘুমাতেও পারল না সারারাত। শ্রেয়ান হা হয়ে দেখছে। বেশ বিস্মিত লাগছে আনিসা কে। শ্রেয়ান আনিসার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। 


তারপর আলতো হাতে আনিসা কে বিছানায় শুয়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। 


শ্রেয়ান আনিসার পাশে এক হাত রেখে তার দিকে ঝুঁকে বসে আছে। চোখের পাতা না পড়া দৃষ্টি দিয়ে দেখছে। 


আনিসা একটু নড়েচড়ে শুয়ে শ্রেয়ানে হাত গলার সাথে মিশিয়ে ধরে। শ্রেয়ান জানে এটা সে ঘুমের ঘোরে করেছে। তবুও তার মাঝে এক অন্য রকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি জাগে। আনিসার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে হাসি দেয়। 


হঠাৎ আনিসা হুড়মুড়িয়ে উঠে। শ্রেয়ানের থেকে দূরে গিয়ে জড়সড় হয়ে বসে পরে। 

আনিসার ভয় পাওয়া দেখে শ্রেয়ান বলল,

"চিল। আমি অন্য কেউ নয়। ঘাবড়িও না।"

"......


শ্রেয়ান একটু চুপ থেকে আনিসার দিকে তাকিয়ে বলল,

"ওকে তুমি ঘুমাও। আমি চলে যাচ্ছি।"


শ্রেয়ান চুপচাপ চলে যায়। আনিসা ভয়ে গুটিয়ে পড়ে। চোখ মেলে শ্রেয়ান কে দেখে ভয়ে সে লাফিয়ে উঠেছিল। 


শ্রেয়ান এলোমেলো চুল নিয়ে হাই তুলতে তুলতে নিচে নামছিল। হঠাৎ কেউ একজন তাকে ঝাপটে ধরে। শ্রেয়ান অবাক হয়। ভালো করে চোখ মেলে দেখে এনা। 


শ্রেয়ানের রাগ হয় মনে হলো দিন টাই নষ্ট হয়ে গেছে। 


এনা ঝাপটে রেখেছে শ্রেয়ান কে। আর শ্রেয়ান বারবার এনার থেকে দূরে যেতে চাইছে। তবুও এনা জড়িয়ে ধরছে। 


"হচ্ছে কি এনা। ছাড়ো।"

"....

"এনা ছাড়তে বললাম তো।"

"না ছাড়ব না।"


দুজনের কথা কাটাকাটি শুনে আনিসা নিজের রুম থেকে চোখ ডলতে ডলতে এলো। 

এসে দেখে ড্রয়িংরুমে দুজন জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 


তা বললে ভুল হবে আনিসা দেখতে পাচ্ছে শ্রেয়ান ছাড়াতে চাইছে কিন্তু মেয়ে টা নিলজ্জ্বের মতো জড়িয়েই রেখেছে। আনিসা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের পাতাও ফেলছে না। তবে কোথায় একটা তার বড্ড টান পরছে। কোথাও যেন তীব্র একটা কষ্ট উঁকি দিচ্ছে। 


"লিভ মি এনা। হোয়াট আর ইউ ডোয়িং রাবিশ? জাস্ট লিভ মি।"


শ্রেয়ান এক ঝাটকায় এনা কে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। এনা বেহায়ার মতো হেসে আবার কাছে আসতে চাইলে তার চোখ যায় আনিসার দিকে। 


এলোমেলো আনিসা কে দেখে তার রাগ উঠে। শক্ত গলায় বলে,

"শ্রেয়ান ও কে?"


এনার কথায় শ্রেয়ান পিছন ফিরে। ছলছল চোখে আনিসা দাঁড়িয়ে আছে। 


"হো ইজ শী শ্রেয়ান?"

"তুমি আমায় প্রশ্ন করছো? তুমি জানো না প্রশ্ন শুনতে আমার ভালো লাগে না? আর তুমি বেশ জানো এটাতে আমি রেগে যাই।"

"প্লিজ টেল মি শ্রেয়ান হো ইজ শী?"


এনা চিৎকার দিয়ে কথাটা বললে শ্রেয়ান শান্ত গলায় বলে,

"শী ইজ মাই ডিয়ার।"

".....

"ইজ দ্যাট ক্লিয়ার? নাও গো।"

"হোয়াট আর ইউ সেয়িং নাউ শ্রেয়ান? ইউ ডোন্ট নো আই লাইক ইউ। লাভ ইউ শ্রেয়ান।" 

কথাটা এনা শ্রেয়ানের কাছে এসে তার বুকের টিশার্ট টা জড়িয়ে ধরে বলল।


এনার কথা গুলি আনিসার মরিচ লাগছিল। যেন তীরের মতো তার মাঝে বিঁধছিল। স্তব্ধ হয়ে শুধু দেখছিল আর শুনছিল। বড় কথা ভেতরটা কেন যেন তার খুব জ্বলছিল। 


এবার শ্রেয়ান ভীষণ রেগে যায়। এনার থেকে নিজের টিশার্ট টা ছাড়িয়ে এনা কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে জোরে বলে উঠে,

"আর ইউ ক্রজি এনা? আই হেট ইউ। প্লিজ লিভ মি। লিভ মি এলোন। নাউ গো।"


এনা জানে শ্রেয়ান রেগে গেছে। রাগলে কি করে তাও জানে। শ্রেয়ান কে না রাগিয়ে এনা আনিসার দিকে রাগি লুক দেয়। তারপর কান্না করতে করতে চলে যায়। 


শ্রেয়ান একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে পিছন ফিরে আনিসার দিকে তাকায়। আনিসার চোখ পানি তে ঝলঝল করছিল। শ্রেয়ান কিছু না বলেই উপরে উঠে যায়। 


আনিসার বড্ড খারাপ লাগে। তখন এনার সাথে শ্রেয়ান কে দেখে আনিসা যেন পুড়ে যাচ্ছিল। আর এখন শ্রেয়ান তাকে একটি কথাও না বলে চলে যাওয়াতে ভেতরটা তার খা খা করছে। এক অন্যরকম কষ্ট লাগছে বুকের গহীনে। শ্রেয়ান যদি একটু কিছুও তাকে বলত, যদি এটাও বলত, 'ফ্রেশ হয়ে নাও ব্রেকফাস্ট করবে।' তবুও যেন আনিসা একটু শান্তি পেত। মনটা একটু হলেও ভালো হতো। কিন্তু এখন যে বড্ড পুড়ছে। অশান্ত হয়ে উঠেছে তার মন। 


শ্রেয়ান চুপ করে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। 

তখন আনিসার টলমল করা চোখ গুলির দিকে তাকালে তার বুক টা ধক করে উঠে। বুকের বা পাশের মাংস পিন্ডটায় বড্ড টান লাগে। সেখানে চিন চিন করা একটা কষ্ট পায় শ্রেয়ান। 


সেই কষ্ট টায় শ্রেয়ান কথা বলতে পারছিল না। তার গলা টাও কেমন ট্রাফিকজ্যামের মতো হয়ে গিয়েছিল আনিসার চোখ দেখে। তাই একটা শব্দ করতে পারল না। কথা না বের করে চলে এসেছে। মন টা তার সাগরের পানির মতো উতালপাতাল করছে। 


শ্রেয়ান শাওয়ারের নিচে দুই হাত দেওয়ালে ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেওয়ালে দুই হাত দিয়ে মাথা নিচু করে আছে। ঘাড়ে, মাথায় পরা পানি গুলি টলটল করে বেয়ে গড়িয়ে পরছে নিচে। শ্রেয়ান মনে মনে ভাবছিল,

"আনিসার চোখে জমে থাকা পানি গুলিও কি এই ভাবে গড়িয়ে পরত যদি সুযোগ পেত? তবে কি টলটল করে গড়িয়ে পানি পরার সুযোগ টা পায়নি? নাকি পর্যাপ্ত পানি ছিল না? কিন্তু যতটুক পানি ছিল তার কারণ কি? এনা কে দেখে? নাকি এনা কে আমার সাথে দেখে? বুঝতে পারছি না। কিন্তু এটা স্পষ্ট তার চোখের মাঝে কিছু ছিল। হয়তো.... আনিসা তোমারও কি নেশা হয়ে গেল নাকি শ্রেয়ান?"


আনিসা গিয়ে দরজা বন্ধ করে ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে আছে। 


বুকের গভীর টা টগবগ টগবগ করছে। শরীর টাও ক্রান্ত লাগছে খুব। ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে মুখ করে আনিসা মনে মনে বলতে থাকে,

"লোক টা আমায় কেন কিনে আনল? যা ভেবে ছিলাম তা তো নয়। আমার কাছে আসারও চেষ্টা করেনি। না করেছে আমার সাথে কোনো রকম জোর। তাহলে কোন কারণে আমার দাম এক কোটি টাকা দিল? উনি আমাকে কিনেছে ধরতে গেলে উনি আমার মালিক। উনার সব কথা শুনতেই এখন আমি বাধ্য। উনি যদি আমার সাথে জোর করেই কিছু করতে চায় না চাইলেও আমি সব বিসর্জন দিতে বাধ্য। কিন্তু উনি তো তাও করে না। আমাকে কাছের একদম নিজের মানুষের মতো করে যত্ন করে রাখছে। নাকি...."


আনিসা আর কিছু ভাবতে পারল না। দরজার ওপাড়ে শ্রেয়ানের ডাক পরল। আনিসা কে ডাকছে। 


অন্য সময় হলে হয়তো আনিসা শ্রেয়ানের ডাকে সাড়া দিত। কিংবা দরজা খুলে তার সামনে যেত। তার নেশাভরা চোখের দিকে তাকাত। কিন্তু এখন তার একটুও ইচ্ছা করছে না এসবে। 


ওদিকে শ্রেয়ান ডেকেই চলছে। 

"আনিসা আনিসা।"

"....

"আনিসা শুনতে পাচ্ছো? আনিসা দরজা খুলো।"

".....

"আনিসা ওপেন দ্যা ডোর।"

".....

"আনিসা প্রচন্ড রাগ উঠছে কিন্তু। সাড়া দিচ্ছো না কেন? আনিসা আনিসা কি করছো তুমি? ওপেন দ্যা ডোর ডেমেট। দরজা খুলো।"


শ্রেয়ান দরজা ধাক্কাচ্ছে আর তাকে ডাকছে। 


আনিসা শ্রেয়ানের ডাকে কিছুই বলল না। একবার দরজার দিকে তাকিয়ে আবার মুখ ফিরিয়ে নেয়। 

আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের মনের সাথে কথা বলতে থাকে।


ওদিকে শ্রেয়ানের মারাত্মক রাগ হতে লাগল। সাথে খুব ভয়। 


'একটা মেয়ে এত ডাকার পরেও কেন সাড়া দিবে না? এত ডাকার পরেও কি কেউ সাড়া না দিয়ে মৌন থাকতে পারে? কিছু হলো না তো?'

শ্রেয়ান কথাটা ভেবেই ভয় পায়। 


সে ছুটে যায় নিজের রুমে। চাবি টা নিয়ে আসতে যায়। 


"ভালোবাসার মানুষের জন্যে যদি ভয়ই না পায় তবে সেটা ভালোবাসা কিসের? ভালোবাসায় সামান্যা ভয় থাকতে হয়। আর সেই ভয় টা হতে হয় ভালোবাসার মানুষ কে হারানোর ভয়। হারানোর ভয় থাকলে আকঁড়ে রাখাটা প্রবল হয়। ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের কাছে আকঁড়ে রাখার ইচ্ছা টা চূড়ান্ত হয়। ফলশ্রুতি তে ভালোবাসায় ভালোবাসা জন্ম নেয়।" 


চলবে.....



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !