গল্পঃ--- আমার নেশা তুমি
লেখিকাঃ-- Sabriha Sadi (সাদিয়া)
পর্ব : ৭
শ্রেয়ান তাড়াতাড়ি করে চাবি নিয়ে এসে দরজা খুলে। দৌড়ে ভেতরে যায়। আনিসা নেই।
আনিসা কে দেখতে পায় ব্যালকুনিতে। আনিসা কে ঠিক দেখে শ্রেয়ানের রাগ হয়। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। দাঁত চেঁপে যেতে থাকে আনিসার কাছে।
শ্রেয়ান গিয়েই আনিসার বাহু ধরে তার দিকে ফিরায়। আনিসা কিছু বুঝে উঠার আগেই শ্রেয়ান তার গলা চেঁপে ধরে।
"এত সময় কোথায় ছিলি? তোকে যে ডাকছিলাম কানে কি শুনিস নি? এত অভিনয় করতে জানিস সবার মতো? আমার ডাকে সাড়া দিস নি কেন? ডেমেট আন্সার মি।"
"....
আনিসা উত্তর দিবে কি? শ্রেয়ান তার গলা এত জোরে চেঁপে ধরেছে যে সে এখন কাশছে। তার গলার মাঝে কোনো পানি নেই। কিন্তু ভয় আর কষ্টে চোখ দিয়ে পানি চলে আসে।
আনিসার চোখের পানির দিকে শ্রেয়ানের চোখ গেলে শ্রেয়ান কেমন নেতিয়ে যায়। আনিসার গলা ছেড়ে দেয়। নিমিষেই শ্রেয়ান যেন শান্ত হয়ে যায়।
তখন শ্রেয়ানের প্রচন্ড রকম রাগ হচ্ছিল। তার কথা না শুনলে কথার অবাধ্য হলে শ্রেয়ান ভীষণ ভাবে রেগে যায়। রাগ তো শয়তানের খেলা তখন শ্রেয়ান নিজেও জানে না রাগে সে কি করছে বা কাকে কি বলছে। শ্রেয়ান যেন এক ছন্নছাড়া উন্মাদ হয়ে উঠে।
তখনের রাগ সামলাতে না পেরে সে হুট করেই এমন একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে।
আনিসা যেন প্রাণ পেল। গলায় হাত দিয়ে কাশছে আর চোখ দিয়ে পানি ফেলছে। খুব ব্যথা লাগছে গলায়।
শ্রেয়ান আনিসার পিছল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেও বুঝতে পেরেছে এই বাচ্চা মেয়ের উপর তার রাগ দেখানো ঠিক হয়নি। রাগ টা একটু কন্ট্রোলে রাখতে পারলে এমন কিছু হতো না। শ্রেয়ানের এখন নিজের উপর রাগ হচ্ছে নিজের কাজের জন্যে। অথচ এই রাগের জন্যেই এমন একটা কাজ করল সে।
শ্রেয়ান পিছন ফিরে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। রাগ কমানোর জন্যে। আর বা হাতে কপাল স্লাইড করছে। রাগে তার মাথাও ব্যথা করছে যার কারণে কপাল ডলছে।
শ্রেয়ান একটু পর আনিসার দিকে ফিরে। আনিসা কেঁদে কেটে নাক মুখ ভিজিয়ে ফেলেছে। শ্রেয়ানের মায়া হয় পাহাড় সমান। যে পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছানো যায় না। ভেতরটা টন টন করছে আনিসার কান্না ভরা মুখ দেখে।
শ্রেয়ান ধীর গলায় বলল,
"আ আনিসা আম স সরি। আমি আসলে.."
"....
আনিসা কথা না বলে কান্নাই করছে।
"আনিসা আমি বুঝতে পাড়িনি। আমার রাগ হয়ে গিয়েছিল। প্লিজ সরি। আনিসা লুক এট মি প্লিজ সরি টু সেয়।"
"....
আনিসার কান্না দেখে শ্রেয়ান তার কাছে আসে দুই পা। তার দিকে হাত বাড়ালে আনিসা তার আগেই নিজের হাত দিয়ে শ্রেয়ানের হাত সরিয়ে নেয়।
শ্রেয়ানের সম্মানে তা বেশ লাগে। তবুও আবার আনিসার দিকে হাত বাড়ায়। আনিসা এখন ফের এমন করে। এখন সে জোরে কান্না করে দৌড় দিতে চায়। শ্রেয়ান তার হাত আগলে ধরে।
আনিসা শ্রেয়ানের দিকে না তাকিয়ে কান্না করে করে নিজের হাত ছাড়াতে চায়। আর শ্রেয়ান শক্ত করে হাত ধরে শান্ত ভাবে দাঁড়িয়ে রয়।
শ্রেয়ান এখন জোরে টেনে আনিসা কে নিজের কাছে নিয়ে আসে। নিশ্বাস নেওয়ার সময় না দিয়েই আনিসা কে নিজের বুকে ঝাপটে নেয়।
জীবনে এই প্রথম মনে হয় তার বুকটা শীতল শীতল অনুভব লাগছে। শ্রেয়ান চোখ বন্ধ করে নেয়।
আনিসাও শ্রেয়ানের বিশাল বুকের উম পেয়ে যেন গুটিয়ে যায়। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে শ্রেয়ানের বুকে কান্না করে। শ্রেয়ান তখন আনিসা কে জড়িয়ে নেয় আরো শক্তে।
"ডিয়ার সরি। প্লিজ সরি। আমি তখন বুঝিনি।"
"....
"রাগ হয়ে ছিল আমার আনিসা। তাই ওমন ভুল করে ফেলেছি। বুঝতে পারিনি আমি। সরি।"
"....
ততক্ষণে আনিসার ফুঁপিয়ে করা কান্না একটু দম নিয়েছে। শ্রেয়ান যেন আনিসা কে বুকে পেয়ে শীতল থেকে শীতলতর হচ্ছে।
বেশ সময় যাওয়ার পর শ্রেয়ান আনিসা কে ছেড়ে দেয়। তারপর লম্বা লম্বা পা দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। যাওয়ার আগে আনিসা কে কিছু বললও না। আর একবার পিছনেও তাকাল না।
আনিসা চোখে পানি নিয়ে ঠোঁট দিয়ে বিড়বিড় করে বলে ফেলল,
"লোকটা ভীষণ রকম অদ্ভুত।"
শ্রেয়ান ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে। আনিসা কে দেখতে পায় না। দ্বিধা নিয়েও আনিসার ঘরে একবার উঁকি দিয়ে আনিসা কে দেখে নেয়। তারপর অফিস চলে যায়।
একটু পর আমেনা আন্টি আসে। শ্রেয়ান বলে গিয়েছিল আসতে। আমেনা আন্টি এসে রান্নাঘরে চলে যায়।
খাবার নিয়ে গুটগুট পায়ে আনিসার রুমে যায়। শ্রেয়ান আমেনা আন্টি কে বলে দিয়েছে তাকে কখন কি করতে হবে। আনিসার খেয়াল রাখার কথা বলেছে।
আমেনা আন্টি গিয়ে দেখে চেয়ারে ফুটফুটে এক মেয়ে বসে আছে। এ যেন সদ্য ফুটে উঠা এক দুর্দান্ত গোলাপ। যা সবার আশা প্রত্যাশা। সবার কাম্য। এই গোলাপ পাওয়ার লোভ যেন সবার উবছে পড়া। আমেনা আন্টি মুগ্ধ হয়ে আনিসার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
আজকাল এমন প্রাকৃত শুভ্রতা খুব কম দেখা যায়। আনিসার শুভ্র মায়া মাখা মুখ টা আমেনার চোখ ধাঁধালো ছিল। আমেনার চোখে এই মেয়েই চির সুন্দরি।
শ্রেয়ানের চোখ কে আমেনা আন্টি মনে মনে সাধুবাদ দিচ্ছিল। চোখ আছে ছেলের। না হলে কি এমন কুমারী গোলাপ ফুল কে আনে?
আমেনা আন্টি আনিসার কাছে যায়।
"মা খেয়ে নাও।"
"....
আমেনা আন্টি আনিসার চোখ মুখ দেখে বুঝতে পায় সে অবাক হয়েছে।
"অবাক হইও না মা। আমি আমেনা। শ্রেয়ান বাবা আমায় আমেনা আন্টি বলে ডাকে। তোমার যা মন চায় ডেকো।"
আনিসার মুখ দিয়ে শুধু "ওও" ভেসে আসে।
"মা তুমি কাঁদছিলে নাকি?"
আমেনা আন্টির কথা শুনে আনিসা চোখ মুছে নেয়।
"না তো আন্টি। বাদ দিন। আপনি কখন আসলেন?"
"একটু আগে।"
"ওও।"
"হুম মা এখন খেয়ে নাও।"
"আ আসলে আন্টি আমার খিদে নেই। পরে খেয়ে নিব।"
"তা বললে হয় নাকি? আসো আমি তোমায় খায়িয়ে দেই?"
".....
আনিসার উত্তরের আশা না করে আমেনা আন্টি ততক্ষণে খাবার তুলে দেয় মুখে। কি করবে? তার যে আনিসা কে মনে ধরেছে।
আনিসার চুপ আছে। কত দিন হলো তাকে কেউ খায়িয়ে দেয় না। অবশ্য সেদিন লোক টা তাকে খায়িয়ে দিয়েছিল। অদ্ভুত এক টান অনুভব করেছিল শ্রেয়ানের প্রতি।
আমেনা আন্টি আনিসার মুখে খাবার তুলে দিলে আনিসা চুপ করে খেয়ে নেয়।
মা কে খুব মনে পরছে। আনিসার মাও স্কুল থেকে এলে তাকে এই ভাবে খায়িয়ে দিত। মা মারা যাওয়ার পর থেকে কোনো নারীর হাতে তার খাওয়া হয় নি। আমেনা আন্টি কে আনিসা জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। আমেনাও বুঝতে পারে হয়তো মা নেই।
খাওয়ার পর আনিসা অনেকক্ষণ তার কোলে শুয়ে ছিল। আর আমেনা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে অনেক গল্প করল।
আনিসা আর আমেনা নিচে নামে। আনিসার মন টাও এখন বেশ ভালো লাগছে। সকালের ঘটনা টা তার মন থেকে সাইডে গেছে। আনিসা সোফায় বসে কার্টুন দেখছে।
শ্রেয়ান নিজের কাজ রেখে অবাক হয়ে আনিসা কে দেখছে।
অফিসের কাজ রেখেও বারবার ল্যাপটপ টা দিকে নজর দিচ্ছিল। সারা বাড়িতে সিসি ক্যামেরা। কিন্তু সব রুমে না। শুধু তার রুমে আর ড্রয়িংরুমে। এ ছাড়া সব রুমে তার দরকার বলে মনে হয়নি। তাই লাগায় নি।
ল্যাপটপে বসে আনিসার হাসি মুখ টা দেখছে। আনিসা কখনো কখনো হেসে উঠছে দাঁত বের করে। আবার কখনো ঠোঁট টিপে হাসছে।
হাসি গুলি শ্রেয়ানের বুকে বিঁধছিল। মনের মাঝে রোমাঞ্চকর এক অনুভূতি অনুভব করছিল। শ্রেয়ান যেন অফিসে ঠিক থাকতে পারছিল। বারবার ইচ্ছা করছিল আনিসার সামনে বসে আনিসার সেই মন মাতানো হাসি দেখবে।
আনিসা টিভি বন্ধ করে দৌড়ে উপরে উঠছিল।
শ্রেয়ান বিড়বিড় করছিল,
"কুমারী আনিসা তুমি স্বভাবেও বাচ্চা। এখনো বাচ্চামি তেই আবদ্ধ আছো।"
আনিসা ছুটে চলে যায় শ্রেয়ানের রুমে।
.
.
.
.
.
.
.
.
চলবে.....


