গল্পঃ--- আমার নেশা তুমি
লেখিকাঃ-- Sabriha Sadi (সাদিয়া)
পর্ব : ৮
"মনের টান হচ্ছে ভালোবাসার টান।"
শ্রেয়ান ভেবেছে আনিসা হয়তো তার রুমে চলে গিয়েছে। তাই আবার সে কাজে মনে দেয়।
হঠাৎ তার বেহায়া মন যেন ল্যাপটপের স্কিনে যায়। স্কিনে স্পষ্ট আনিসা কে দেখতে পায়। আনিসা তার রুমে ভেবেই শ্রেয়ান অবাক হয়। ভ্রু কুঁচকে ল্যাপটপের স্কিনে তাকায়।
আনিসা শ্রেয়ানের বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে আছে। আবার উঠে বসে। লাফ দেয়। তুলতুলে বিছানায় সে লাফালাফি ফালাফালি নাচানাচি করছে। শ্রেয়ান এমন দৃশ্য দেখে কি করবে কি রিয়েক্ট করা উচিৎ সে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না।
শুধু ডান হাতের দুই আঙ্গুল ঠোঁটে কাছে নিয়ে ঠোঁট চেঁপে হাসছে।
আর আনিসা তো আনিসার কাজে ব্যস্ত। বিছানায় শুয়ে বসে লাফালাফি করছে।
বিড়বিড় করে বলছে,
"ইস বিছানাটা যে আমার কত ভালো লাগে। কি নরম তুলতুলে। যেন তুলার বস্তা। না না এটা হচ্ছে সফট কেক। আর আমি সফট কেকের মাঝে শুয়ে আছি। হিহিহি।"
আনিসার কথা শুনে এবার শ্রেয়ান দাঁত বের করে হাসে। ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বলে,
"তাই বুঝি পাগলি? পাগলি কে এর থেকেও নরম আর উষ্ণ জায়গায় ঠাঁই দিব।"
"ইসস রে বিছানা, না মানে সফট কেক টা যদি আমার হতো।"
"বললাম তো পাগলি দিব।"
দুজন এভাবেই কথা বলছিল।
হঠাৎ আনিসা উফ করে উঠে।
"আমার পেট টা জ্বলছে কেন? কি হলো?"
শ্রেয়ান মনোযোগ দিয়ে স্কিনের তাকায়।
আনিসা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। পড়নে তার একটা কালো থ্রীপিজ। ওড়নাটা গলায় ঝুলিয়ে নেয়। শ্রেয়ান তা দেখে ঢুক গিলে। চোখ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।
আনিসা আস্তে করে জামায় হাত দিচ্ছে। হয়তো উন্মুক্ত করে দেখতে চাইছে জ্বলার কি কারণ।
ওদিকে শ্রেয়ানের করুণ দশা। ল্যাপটপের স্কিনে তাকিয়ে আছে অথচ বুকটা জ্বলছে। এক অজানা কারণে বুক তার জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
আনিসা আস্তে আস্তে নিজের জামা উপরে তুলতে থাকে।
অনেক দূর থেকে শ্রেয়ান ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলছে,
"আনিসা স্টপ ইট। জাস্ট স্টপ ইট আনিসা।"
"স্টপ দিজ ননসেন্স। আনিসা নো, নো আনিসা। আনিসা প্লিজ স্টপ ইট।"
শ্রেয়ান বলছিল আর দম নিয়ে নিশ্বাস নিচ্ছিল।
আনিসা টুক করে পেট টা উন্মুক্ত করে দেয়। খালি রুমে। সে ছাড়া কেউ নেই। তাই এভাবে না দেখার কিছুই নেই।
বেচারি আনিসা জানেও না বহুদূর থেকেও এক জোড়া চোখ তাকে অবলোকন করছে।
কালো জামার মাঝে শুভ্র পেট রোদের মতো ঝিকঝিক করে শ্রেয়ানের চোখে ভাসল। শ্রেয়ান চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে সেই অর্ধ উন্মুক্ত শুভ্র পেটের মাঝে। নেশা ধরানোর মতো দৃশ্য। এই নেশা বড্ড প্রবল।
শ্রেয়ানের বুকে ঝড় হচ্ছে। বাহিরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক অথচ ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
শ্রেয়ান বারবার চাইছে চোখ ফেরাতে। কিন্তু মন চোখ কোনো টাই সাই দিচ্ছে না।
শ্রেয়ান নিলজ্জ্বের মতো আনিসার ওই সাদা পেটের দিকেই তাকিয়ে রয়। আর যেন সে ঠিক থাকতে পারছে না। বহুদূরেও থাকতে পারছে না। নিজেকে নিজের মাঝে রাখা টা শ্রেয়ানের দায় হয়ে উঠছে।
"ইসস রে নখ লেগে কেটে গেছে। লাল হয়ে আছে। দূর এতো লাফালাফি করেছি বলেই এমন হলো। ইসস জ্বলছে রে।"
আনিসা নিজেই বলতে থাকে এমন কথা আর আফসোস করতে থাকে।
শ্রেয়ান আর পারছে না। বুকের ভেতরের তুফান টা দমাতে পারছে না বলে শ্রেয়ান এক প্রকার জিদেই ল্যাপটপের ডালা টা ঠাস করে বন্ধ করে দেয়। আর একটু হলে ভেঙ্গেই যেত।
শ্রেয়ানের পুরো শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। শ্রেয়ান টাই টা ঠিলে করে নেয়।
জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে তারপর অফিসের সার্ভেন্ট কে বলে তার জন্যে ঠান্ডা এক গ্লাস বরফ পানি আনতে।
ওদিকে আনিসার পেট জ্বলছে। জামা ঠিক করে শ্রেয়ানের রুম থেকে বের হয়।
নিচে গিয়ে নাক ফুলিয়ে আমেনা আন্টি কে বলে,
"মামুনি।"
"বলো মা।"
এর মাঝেই আমেনা আন্টি আর আনিসার বেশ ভাব হয়।
"মামুনি দেখো না আমার পেট টা ছিঁড়ে গেছে।"
"কি? কই দেখি?"
"এই যে দেখো।"
আনিসা আবার পেট উদাম করে ধরে আমেনার সামনে।
"ছিঃ মা এই ভাবে ধরতে হয়? কেউ চলে আসলে?"
"আসবে না এই জনহীন নির্ঝন গুহায় কেউ আসবে না।"
"কি?"
".....
"মা তুমি বসো আমি ঔষধ নিয়ে আসি।"
"আচ্ছা।"
আনিসা গিয়ে সোফায় বসে। আমেনা আন্টি গিয়ে তার জন্যে মলম আনে। হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
"তুমি দাও আমি রান্নাঘরে যাই। তরকারি না হয় লেগে যাবে।"
"ঠিক আছে।"
আনিসা নিজেই পেটে একটু মলমের আবরণ দিয়ে দেয়।
ওদিকে শ্রেয়ানের বেহাল অবস্থা। বরফ পানি খেয়েও তার শরীর মাথা মন কিছুই ঠান্ডা হচ্ছে না। সে কোল্ড কফি অর্ডার দেয় আনার জন্যে।
তাড়াতাড়ি শ্রেয়ানের সামনে কোল্ড কফি আনা হয়। শ্রেয়ান সময় না নিয়ে এত ঠান্ডা কফি টা নিমিষে শুষে নেয়।
তবুও শ্রেয়ান শীতল হতে পারছে না। নিজেকে খুব বিচলিত লাগছে তার।
এত অস্থিরতা আর বিচলতার মাঝে শ্রেয়ানের সেই শীতল মুহূর্ত টা মনে পড়ে। সকালে আনিসা কে জড়িয়ে নেওয়ার সেই মাতোয়ারা সময় টা শ্রেয়ানের মস্তিষ্কে নাড়া দেয় শক্ত ভাবে। শ্রেয়ানের মস্তিষ্ক আরো বিকৃত করে তুলে সেই মুহূর্ত টা।
শ্রেয়ান আর কিছু ভেবে পায় না। নিজের চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়।
কিছু না ভেবে বেড়িয়ে যায় নিজের রুম থেকে। তাকে এখন বাসায় যেতেই হবে। এটা এখন বাধ্যতামূলক।
শ্রেয়ান গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে অফিস থেকে।
যাওয়ার পথে কি মনে করে অনেক গুলি আইসক্রিম আর এক গুচ্ছ লাল গোলাপ নেয়।
আনিসা সদ্য গোসল করে এলো। চুল দিয়ে টপটপ করে পানি ঝারছে।
শ্রেয়ান কে আসতে দেখে আনিসা মাথায় ওড়না টা টেনে দেয়। শ্রেয়ান সেটা খেয়াল করে। এটা তার বেশ ভালো লাগার মাঝে একটা।
আনিসা উপরে চলে যেতে চাইলে শ্রেয়ান ডাকে,
"আনিসা।"
"....
আনিসা পেছন ফিরে তাকাল।
"নিচে নামো।"
"....
"কি বললাম?"
আনিসা কোনো কথা ছাড়া চুপ করে নিচে নামে।
"নাও এই গুলি।"
"কি?"
"তোমার মাথা।"
"কি?"
আনিসা শ্রেয়ানের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। শ্রেয়ান আনিসার হাত টেনে সোফায় নিয়ে যায়। আনিসা কে ইশারা করে বসতে বলে আনিসার সামনে আইসক্রিম আর ফুল গুলি রাখে।
আনিসা ফুলের দিকে নজর না দিয়ে আইসক্রিমের প্যাকেট হাতে নেয়।
যা শ্রেয়ান কে আশাহত করে। সে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করে। নিজে কে শান্ত করতে হবে। তাই শ্রেয়ান আনিসার পাশে বসে। আনিসার দিকে পলক না পড়া চোখ দেয়। আনিসা কে দেখেই একটু শান্ত করুক নিজেকে।
আনিসার তখন কোনো খেয়াল নেই। কে আছে কে দেখছে সে দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সে নিজের মতো করে আইসক্রিমে ঠোঁট লাগায়। মন মতো তা খেতে থাকে।
আনিসা তৃপ্তি নিয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে। কিন্তু তার জন্যে আইসক্রিম নিয়ে আসা লোক টা তৃপ্তি হীন হয়ে গিয়েছে। আরো অতৃপ্ত হয়ে উঠেছে তার মন। আনিসা কে দেখছে আর মন টগবগ করছে। গরম তেলের মতো মনের ভেতর নানা কিছু টগবগ টগবগ করে ফুটছে।
আনিসার ঠোঁটের পাশে লেগে থাকা আইসক্রিমের টুকরো গুলি শ্রেয়ানের মাথা নাড়িয়ে দিচ্ছে। তার মস্তিষ্ক বারংবার বিকৃত করে তুলছে।
আনিসা একবারও শ্রেয়ানের দিকে তাকাচ্ছে না। সে যে আনিসা কে মুগ্ধ হয়ে দেখছে তাও দেখছে না আনিসা।
শ্রেয়ানের রাগ হতে থাকে। মনের নানা কিছু ভাব টাও প্রবল হতে থাকে। নিজেকে সামলে রাখাটা মুশকিল হয়ে উঠছে ক্রমশ। শ্রেয়ান মনের বিরুদ্ধে আর যুদ্ধ চালাতে পারছে না। খুব লড়াই করছে মনের সাথে নিজেকে নিজের জায়গায় রাখতে। নিজেকে সামলে রাখতে কিন্তু হচ্ছে না। কিছুই হচ্ছে না।
শ্রেয়ান আনিসার দিকে তাকিয়ে আছে। তার ঠোঁটের পাশে লেগে থাকা আইসক্রিম টার দিকে নজর দেয়। হুট করে আনিসার মুখের কাছ থেকে আনিসার খাওয়া আইসক্রিম টা কেড়ে নিজের মুখে পুরে দেয় শ্রেয়ান।
রাগে গটগট করে আইসক্রিম গিলতে গিলতে উপরে চলে যেতে থাকে শ্রেয়ান।
আর মনে মনে বলতে থাকে,
"এই জন্যেই বাচ্চা মেয়েদের নেশায় পড়তে নেই। কোনো দিকে তাদের খেয়াল থাকে না। তারা শুধু তাদের স্বভাবেই মেতে থাকে। আনিসা তোমায় আমি..."
চলবে.....
(আশা করছি গঠনমূলক কমেন্ট পাবো আপনাদের কাছ থেকে)
Sabriha Sadi


